বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি) : রাজনীতির নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

141

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বার্ন ইউনিট-ভাষণ
রাজনীতির নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার আহবান প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের জঘন্য অপকর্মের সঙ্গে যারা যুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
তাঁর সরকার আগুন সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রনে সম্ভাব্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চাঁনখারপুল এলাকায় ‘শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউট’-এর উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ এবং ১৫ সালে বিএনপি-জামাতের পেট্রল বোমা হামলায় পথচারি, গাড়ি চালক-হেলপার, যাত্রীদের পুড়িয়ে হতাহত করার প্রেক্ষিতে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে ৫২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মোট ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এ বিশ্বের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এই বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ত সেনবাহিনী ও এলাকাবাসীসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এখানে উন্নত যন্ত্রাংশ সংযোজন, বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভূক্তিসহ অন্যান্য উন্নয়নের কাজ করে যাবো।
তিনি বলেন, এটি যাতে একটি উন্নত বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট হিসেবে যাতে গড়ে ওঠে সেই ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা করবো। যাতে আগুনে পুড়লের আমাদের কোন লোককে আর বিদেশে যেতে না হয়। দেশে বসেই যেন চিকিৎসাটা পায় এবং এজন্য নার্সদেরও বিদেশ থেকে প্রয়োজনে ট্রেনিং করিয়ে আনা হবে এবং নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে টেকনিশিয়ানদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সরকার প্রধান বলেন, আামাদের পরিকল্পনা রয়েছে, অনেকদূর আমাদের যেতে হবে। তবে, আমাদের ৫ বছর সময় প্রায় শেষ এবং সামনে নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয় আমরা আবার আসবো (ক্ষমতায়) তখন এই কাজতে আরো দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আর যদি কোন পরিবর্তন (ক্ষমতার পালাবদল) হয় তাহলে ঐ বার্ন ইউনিটের মত এটাও যেন থমকে না যায় সেটাও সকলকে দেখতে হবে। কারণ, এটার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ অব্যাহত থাকুক সেটাই আমরা চাচ্ছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার বক্তব্য রাখেন । স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি স্মারক উপহার দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, এই ইনস্টিটিউটে পোড়া রোগীরা যেমন উন্নততর সেবা পাবেন, তেমনি চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন।
১২তলা বিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটে ৫৪ ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং অত্যানুধিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জরুরি ভাবে রোগী নিয়ে আসার জন্য ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড সুবিধা থাকছে। সোলার প্যানেল ও বৃষ্টির পানি সঞ্চয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮০টি গাড়ি রাখা যাবে। ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ইনস্টিটিউট ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।
এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি জার্মানি থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও কানাডা থেকে কিছু সরঞ্জাম আনা হবে। হাসপাতালটির জনবল নিয়োগের জন্য প্রায় ২ হাজার ২শ পদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। প্রায় ৪ হাজার মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয় যার মধ্যে প্রায় ৫শ মানুষ আগুলে পুড়ে মুত্যুবরণ করে। তারা সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি ভাংচুর করে, যার মধ্যে বিআরটিসি’র জন্য সদ্য ক্রয়কৃত ডবল ডেকার বাসগুলোও ছিল।
এখনও সে সব আগুলে পোড়া রোগীদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং তাঁদের সাহায্যার্থে তাঁর সরকার সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিতিৎসরকরাও তাদের সীমিত সামর্থ নিয়েই পীড়িত মানুষের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।
জনগণের জন্যই তাঁর রাজনীতি এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এটা কি ধরনের রাজনীতি প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোন ভাবেই আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় (প্রেটল বোমা হামলার ঘটনা) বাংলাদেশের মানুষই তাদের প্রতিরোধ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তাঁর সরকারের সাফল্যেরও উল্লেখ করেন।
চলবে-বাসস/এএসজি-এফএন/একেএইচ/১৬৫০/আরজি