উত্তেজনাপূর্ণ এল ক্ল্যাসিকোতে কোন দলই জিততে পারেনি, লীগে এখনো অপরাজিত বার্সা

324

বার্সেলোনা, ৭ মে ২০১৮ (বাসস) : চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা লা লিগায় তাদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড এখনো বজায় রেখেছে। রোববার ক্যাম্প ন্যুতে মৌসুমের শেষ এল ক্ল্যাসিকোতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ম্যাচটিতে ২-২ গোলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। যদিও সার্জি রবার্তোর প্রথমার্ধের লাল কার্ডে শেষ পর্যন্ত বার্সা ১০ জনকে নিয়েই রিয়ালকে সামাল দিয়েছে।
পুরো ৪৫ মিনিট বার্সা ১০জন নিয়ে খেলেছে। কিন্তু তাতে করে তাদের টানা ৪২ ম্যাচের অপরাজিত থাকার রেকর্ডে কোন বাঁধা আসেনি। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত লীগে অপরাজিত রয়েছে কাতালান জায়ান্টরা।
এটা ছিল বার্সা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শেষ এল ক্ল্যাসিকো। রবার্তোর দুর্দান্ত এক রাইট-উইং ক্রসে লুইস সুয়ারেজ ১০ মিনিটেই বার্সেলোনাকে এগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ১৪ মিনিটে করিম বেনজেমার হেডে দারুন এক ফিনিশিংয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। এই গোলের মাধ্যমে রোনাল্ডো আলফ্রেডো ডি স্তেফানোর মাদ্রিদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮টি ক্ল্যাসিকো গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। একইসাথে গোল দিতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামেননি।
রবার্তোর লাল কার্ডের পরে মাদ্রিদের জয়ের সুযোগ বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে মার্সেলোর মুখে আঘাত করে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন রবার্তো। যদিও এর পরপরই স্যামুয়েল উমতিতির পায়ে পিছন থেকে বাজে ভাবে ট্যাকেল করার অপরাধে গ্যারেথ বেলও লাল কার্ড প্রাপ্তি থেকে কোনমতে বেঁচে যান। ৫২ মিনিটে আবারো বার্সার ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন লিওনেল মেসি। এটি ছিল লীগে তার ২৬তম গোল। যদিও মাদ্রিদের দাবী ছিল এই গোলে যোগানদাতা সুয়ারেজ বল দিতে গিয়ে রাফায়েল ভারানেকে ফাউল করেছিল। কিন্তু এবারও বার্সা তাদের লিড ধরে রাখতে পারেনি। রোনাল্ডেরা পরিবর্তে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামা মার্কো আসেনসিওর সুনির্দিষ্ট এক পাসে বেল প্রায় ২০ গজ দুর থেকে ৭২ মিনিটে মাদ্রিদের পক্ষে সমতাসূচক গোলটি দেন। এটি ছিল বেলের ক্যারিয়ারে প্রথম এল ক্ল্যাসিকো গোল। এই ড্র সত্তেও চ্যাম্পিয়নস বার্সার থেকে ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের পরে তৃতীয় স্থানেই থাকলো রিয়াল মাদ্রিদ।
এর আগে ক্যাম্প ন্যুতে ম্যাচের শুরুতেই মেসির সহায়তায় স্বাগতিকদের এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সুয়ারেজ। যদিও ১০ মিনিটে আর ভুল করেননি এই উরুগুয়ের তারকা। রাইট উইং থেকে রবার্তোর সুনির্দিষ্ট একটি পাসে কেইলর নাভাসকে লো ভলির মাধ্যমে পরাস্ত করেন সুয়ারেজ। যদিও এই লিড পাঁচ মিনিটও স্থায়ী হয়নি। জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুসের ক্রস থেকে বেনজেমার হেডে বল জালে ঢোকার আগ মুহূর্তে রোনাল্ডো পা বাড়িয়ে দিলে রিয়াল সমতায় ফেরে। গত ১২টি ক্যাম্প ন্যু সফরে এটি ছিল রোনাল্ডোর ১২তম গোল। যদিও রোনাল্ডোর একেবারে সাথে লেগে থাকা জেরার্ড পিকের সাথে আঘাতে রোনাল্ডো গোঁড়ালিতে সামান্য আঘাত পেয়েছেন। যে কারনে দ্বিতীয়ার্ধে আর খেলা হয়নি এই পর্তুগীজ তারকার। গত ৩ মার্চের পর থেকে এই প্রথম মাদ্রিদ বস জিনেদিন জিদান বিবিসি’র (বেনজেমা, বেল, রোনাল্ডো) ওপর ভরসা রাখলেন। এরপর অবশ্য মাদ্রিদ বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে। রোনাল্ডোর কাছ থেকেই মূলত গোলের সুযোগগুলো নষ্ট হয়েছে। তবে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকেও এর পিছনে দায়ী করা যায়। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে সব মিলিয়ে হলুদ কার্ড হয়েছে আটটি, আর রবার্তো পেয়েছেন সরাসরি লাল কার্ড। এর মধ্যে রেফারী আলেহান্দ্রো হোসে হার্নান্দেজ প্রথমার্ধেই দেখিয়েছেন পাঁচটি হলুদ কার্ড। দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায় প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে রবার্তোর লাল কার্ডে। মার্সেলোকে মুখে আঘাত করার বিষয়টি অবশ্য রেফারীর চোখ এড়ায়নি।
মাসের শেষে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালকে সামনে রেখে রোনাল্ডোকে নিয়ে জিদান কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। সে কারনেই দ্বিতীয়ার্ধে তার পরিবর্তে মাঠে নামান মার্কো আসেনসিওকে। অন্যদিকে রবার্তোর অনুপস্থিতি পূরণের জন্য ফিলিপ কুতিনহোর স্থানে নেলসন সেমেডোকে মাঠে নামান বার্সা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে। ১০জন নিয়ে খেলেও দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথমে এগিয়ে যায় বার্সা। ৫২ মিনিটে ভারানেকে কাটিয়ে বাম দিক থেকে সুয়ারেজের সুনির্দিষ্ট ক্রসে মেসি কোন ভুল করেননি। রিয়ালের দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে শক্তিশালী ভলিতে নাভাসকে পরাস্ত করেন এলএম টেন। গত পাঁচটি হোম লীগ ক্ল্যাসিকো ম্যাচে এটি ছিল মেসির প্রথম গোল। এরপরপরই ইনিয়েস্তার পাসে সুয়ারেজের একটি প্রচেষ্টা অফ-সাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। ৫৮ মিনিটে ক্যারিয়ারের শেষ এল ক্ল্যাসিকো থেকে বিদায় নেন ইনিয়েস্তা। ৭২ মিনিটে আসেনসিওর পাসে বেলের ভলি আটকানোর সাধ্য ছিলনা টার স্টেগানের।