ড. কামাল খুনীদের সাথে ঐক্য করেছেন : প্রধানমন্ত্রী

1180

শিবচর, মাদারীপুর, ১৪ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনের বিএনপি’র সঙ্গে ঐক্য গড়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এটি খুনী এবং সুবিধাবাদীদের মঞ্চ। ড. কামাল হোসেন যিনি নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী দাবি করেন তিনি খুনীদের সাথে ঐক্য করেছেন। তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন যার বাংলাদেশের জনগণের কাছে কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
তিনি আজ বিকেলে কাঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে আজ অপরাহ্নে এখানে এসে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী সরকার বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, যারা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী আজকে তাদের সাথে দেখলাম ঐক্য করেছেন তিনি, যিনি নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী দাবি করেন। সেই কামাল হোসেনের সঙ্গে আরো জুটেছে কিছু খুচরা আধুলি- এরা সব ঐক্য করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কামাল হোসেন সাহেবকে বাহবা জানাই যিনি বড় বড় কথা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তিনি আজকে ঐক্য করেছেন কারসঙ্গে যে বিএনপি-জামাত জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ত। আজকে তাদের সাথেই তিনি ঐক্য করেছেন। এ সময় তারেক জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে ড. কামালকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ঐক্য করে নেতাও মেনেছেন!
আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় পুনরায় বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া জেলে যাবার পর বিএনপিতে কি একটা লোকও ছিল না যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানোনো যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, যে মানি লন্ডারিং মামলা, ১০ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত এবং পলাতক হিসেবে বিদেশে রয়ে গেছে, তাকেই বিএনপি বানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর সেই চেয়ারম্যানেরই অধীনে ড. কামাল হোসেন গং আজ ঐক্য করেছেন। সরকার প্রধান বলেন, বড় বড় নীতির কথা বলেন যারা তারাই আজকে ঐ খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা মরা গাঙ্গে যোগ দিয়েছেন- আজকে কামাল হোসেন, মান্না, আসম আব্দুর রবরা। তারা কিই বা করতে পারবেন বা কি করতে চান? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং মুহম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, নূরে আলম চৌধুরী লিটন এমপি সমাবেশে বক্তৃতা করেন। আর শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শামসুদ্দিন খান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন তাঁর সরকারের উন্নয়ন সরকার বিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের চোখে পড়ছে না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ ভাগ, জিনিষপত্রের ক্রয় ক্ষমতা মানুষের নাগালের মধ্যে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু, বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, তাদের উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতির উন্নয়ন, সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিংয়ের উন্নয়ন। জনগণ পেট ভরে ভাত খাবে, মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে, সকলে শিক্ষা-দীক্ষা পাবে সেই উন্নয়ন তাদের নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তাই আমি কামাল হোসেনকে সাবাশি জানাই তিনি আমাদের দল ছেড়ে গিয়ে নৌকা থেকে নেমে ধানের শীষের মুঠো ধরেছেন, যে ধানের শীষে শীষ নাই, চিটা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। সেখানে তিনি হাত মিলিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত মর্মে পুনরায় অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, ‘জিয়া ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে খুনী মোস্তাকের সঙ্গে জড়িত ছিল।’ তিনি জিয়া পরিবারকে খুনী পরিবার বলে অভিযুক্ত করে বলেন, এই পরিবার খুনী পরিবার ঐ খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সেখানে আইভি রহমান সহ ২২ জন নেতাকর্মীকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, সেই হত্যার আলামত না রেখে সেই হত্যার বিচার যাতে না হয় সেজন্য ‘জজ মিয়া’ নাটক করেছিল তারা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে। সেই বিচারে তারা সাজা পেয়েছে।
আল্লাহব কাছে এই সময় শোকরিয়া আদায় করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, যুদ্ধাপরাধীদের পরে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারও বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
জামাত-বিএনপিকে অশুভ চক্রের জোট ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭১ সালে জামাত যেমন এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে তেমনি এর ধারবাহিকতায় ওরা যখনই সুযোগ পায় মানুষকে হত্যা করে। শুধু মানুষ খুন নয়, বিএনপি’র সময় বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতি বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয়েছে।
বিডিআর হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক এবং খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তারেক জিয়া বিডিআর হত্যাকান্ডের দিন সকাল ৬টা/ ৭ টার সময় খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া যেখানে ১০টা/১১টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না সেই তিনি ৬টা/ ৭টার সময় ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে পালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। আর তারপরই বিডিআর’র হত্যাকান্ড ঘটে। এই হত্যাকান্ড ঘটার পেছনে ঐ বিএনপি-জামাতেরও হাত ছিল।
বিডিআর এর ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসার মারা গিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে ডিজি সহ প্রায় ৩৩ জনই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এই হত্যাকান্ডের সাথে তারা (বিএনপি নেতৃত্ব) যে জড়িত এতে কোন সন্দেহ নাই। নইলে খালেদা জিয়া কেন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেল এবং একমাসের মধ্যে আর ক্যন্টনমেন্টের বাড়িতে ফেরে নাই। এর জবাব তাকে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা যে খুনী সেকারণেই ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যা সহ তারা যে হত্যা ও সন্ত্রাসের তান্ডব চালিয়েছিল তার কোন তুলনা হয় না। তাদের অপকর্মের কারণেই দেশে জরুরী অবস্থা জারি হয়েছিল। এরপর আবার ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি।
তিনি বলেন, তারা ৫শ মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। হাজার হাজারগাড়ি পুড়িয়ে দেয়, লঞ্চে আগুন, রেলে আগুন দেয়, তাদের অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখনও বহু মানুষ মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে।
আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ঘরে আলো জ্বালবো এই অঙ্গীকার থেকে আজকে তাঁর সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ৯৩ ভাগ মানুষ আজকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
তিনি এ সময় যেখানে গ্রিড লাইন নাই সে সসব স্থানে সোলার প্যানেল করে দেওয়া, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ভারত সহ পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আর একটি ঘরও অন্ধকারে থাকবে না। সব ঘর আলোকিত হবে। আওয়ামী লীগ সেটা করবে এবং আওয়ামী লীগই কেবল তা করতে পারে।
তিনি এ সময় কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, বর্গাচাষিদের জন্য বিনা জামানতে কৃষিঋণ প্রদান সহ কৃষির আধুনিকিকরণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখবে এবং আমরা কৃষির যান্ত্রিকীকরণ করে দেব তাঁরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিপণ্য উৎপাদন করবে।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর জোগান দেওয়ায় তাঁর সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই মানুষ বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আজকে বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি, স্থল সীমান চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘নৌকাই হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির পথ।’
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামীর নির্বাচনেও নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহবান জানান এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আগামীর নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে জনগণের ওয়াদা প্রত্যাশা করলে জনগণ তীব্র স্বরে চিৎকার করে এবং দুহাত উপরে তুলে সমর্থন ব্যক্ত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি ইনশাল্লাহ আগামীতে সরকারে আসতে পারলে এই কাজ আমরা সম্পন্ন করতে পারবো। সেই সাথে রেল সেতুও তাঁর সরকার করে দেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেললাইন চলে যাবে একেবারে বরিশাল হয়ে সেই পায়রা বন্দর পর্যন্ত। দক্ষিণাঞ্চলেও রেললাইন যোগ হবে দক্ষিণাঞ্চলেরও উন্নয়ন হবে। সেই ওয়াদাও করেন প্রধানমন্ত্রী।