ঝালকাঠিতে তুলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

353

ঝালকাঠি, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তুলাচাষ। যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় গত ৭ বছর ধরে রূপালী-১ ও রূপালী ৪ জাতের তুলাচাষ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে জেলার সদর উপজেলার কৃষি ভিত্তিক গ্রাম গাবখানসহ এর আশপাশের এলাকায় ৭০ একর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বেকার দরিদ্র মানুষের। লাভজনক ও ফলন ভালো হওয়ায় তুলাচাষকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এখন চলছে তুলা সংগ্রহের সময়। চৈত্রের শুরু থেকে সাদা তুলায় ভরে গেছে ক্ষেতগুলো। এসব ক্ষেতে তুলা সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলের কৃষিতে তুলাচাষকে নতুন সম্ভাবনা বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানান, উঁচু জমিতে আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে তুলার বীজ বপন করা হয়। এরপর কার্তিক মাস থেকে ফুল ধরে। অগ্রাহায়ন-পৌষে গোলাকার ফল ধরে। আর চৈত্র-বৈশাখ মাসে পরিপক্ক ফলগুলো ফেটে সাদা তুলা বেড়িয়ে আসে। তখন ক্ষেত থেকে তুলা সংগ্রহ করেন চাষিরা। এ বছর তুলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হবে না বলে জানান কৃষকেরা।
২০১১ সালে প্রথমবার গাবখান গ্রামে রূপালী-১ জাতের তুলাচাষ শুরু হয়। ফলন ভালো হওয়ায় পরের বছর থেকে জেলার রাজাপুর ও নলছিটিতে রূপালী-৪ জাতের তুলাচাষ শুরু হয়।
রাজাপুরের তুলাচাষি আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের এলাকার জমিগুলো নিচু হলেও অত্যান্ত উর্বর। আমরা প্রতি বছরই ভালো ফলন পাচ্ছি। তুলাচাষে আমাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শুস্ক মৌসুমে সেচ ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তুলাচাষের বিষয়ে যদি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তবে তুলাচাষ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে। তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উপকূলীয় অঞ্চলে তুলাচাষের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। সেখানে আমাদের তুলাচাষিদের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিয়েছিল তুলা উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা কোন সহায়তা পাইনি। গাবখান গ্রামের ক্ষেতগুলো উচু জমিতে হওয়ায় পানি সেচ বেশি লেগেছে কিন্তু ভালো ফলন হয়েছে।’
গাবখান গ্রামের তুলাচাষি মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘২০১১ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা গ্রামের চার জন মিলে প্রথমবার চার বিঘা জমিতে তুলার চাষ শুরু করি। ফলন ভাল হওয়ায় আমরা ধীরে ধীরে ক্ষেতের আয়তন বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে আমরা ১৭ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর তুলার দাম কিছুটা বেড়েছে। গত বছর প্রতি মণ তুলা ২২০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ২৪০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। আমাদের প্রতি বিঘায় ১০-১২ মণ তুলা উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় আমরা প্রতি বিঘায় ১৫-১৮ মণ তুলা সংগ্রহ করেছি। উৎপাদিত তুলার মান ভালো হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার কটন মিল মালিকরা আমাদের তুলা নেন। তবে উৎপান খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হবে না। তারপরেও এবছর আমাদের বাগান থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার তুলা বিক্রি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে একটু সহায়তা পেলে তুলাচাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।’
চাষি মো. মোবারক আলী বলেন, ‘আমাদের গাবখান তুলা ক্ষেতের জমিতে বালুর আধিক্য বেশি থাকায় প্রচুর পানি দিতে হয়। এখানে কোন নলকূপ নেই। নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে মাসে অন্তত চার বার পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য খাতে ২৫-৩০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। অথচ সে তুলনায় তুলার মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। তারপরেও আমরা তুলার চাষ করছি কারণ এর সাথে গ্রামের বহু মানুষের জীবিকা জড়িত।’
গাবখান তুলা ক্ষেতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন গবিন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘আমরা তুলক্ষেতে পানি, সার, কীটনাশক দেই এবং আগাছা পরিস্কার করি। বর্তমানে তুলা সংগ্রহ করছি। প্রতি মণ তুলা সংগ্রহ করে ৪০০ টাকা পাই। তুলাচাষের জন্য আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছি।’
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ঝালকাঠি কটন ইউনিট অফিসার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তুলা বীজ সাধারনত আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে রোপণ করা হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলে ওই সময় মাঠে পানি থাকায় শুধু উঁচু জমিতে তুলা চাষ করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি আশ্বিন-কার্তিক মাসে যেন বীজ বপন করা যায় এমন তুলার বীজ উদ্ভাবন করতে। এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ চলছে। আশাকরি পরবর্তীতে নিচু জমিতেও তুলাচাষ সম্ভব হবে। তাহলে আমাদের বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হবে না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচাল আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ঝালকাঠিতে ৭০ একর জমিতে তুলাচাষ হয়েছে। আমরা কৃষদের তুলাচাষে উৎসাহিত করছি। এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য তুলাচাষ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা। কেউ তুলাচাষে আগ্রহী হলে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করে থাকি।’