পলাশে ২৮শ’ মে. টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন সার কারখানা হচ্ছে

629

ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : সারের চাহিদা পূরণ এবং সুলভমূল্যে কৃষকের নিকট সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার নরসিংদীর পলাশে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। দৈনিক এর উৎপাদন ক্ষমতা ২৮শ’ মেট্রিক টন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ লক্ষে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পসহ মোট ২০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা,বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
একনেক সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের বার্ষিক চাহিদা ২৬-৩০ লাখ মে.টন এর বিপরীতে বিসিআইসির আওতাধীন ৬টি ইউরিয়া সার কারখানায় বার্ষিক মোট উৎপাদন হয় ৯-১০ লাখ মে. টন। ঘাটতি প্রায় ১৭-২০ লাখ মে. টন। বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে নরসিংদীর পলাশে একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সার কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক ২৮০০ মে. টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা সম্ভব।
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) অক্টোবর ২০১৮ হতে জুন ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ কুমিল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপনের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া। সহজ,সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্যই ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের একটি প্রকল্পও একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মধ্যে অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্লপ্ল্যান রয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্যাম্পাসে সবুজ গাছপালা ও লেক থাকবে। পুরো ক্যাম্পাসটি থাকবে লেক দিয়ে দু’টি অংশে বিভক্ত, যা ৫টি ব্রিজ দিয়ে সংযুক্ত করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পড়ালেখার সুবিধার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসগুলোতে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।এছাড়া এখন থেকে পুরনো সিটি করপোরেশনগুলোতে আর সরকারি অর্থে প্রকল্প দেওয়া হবে না। তাদের স্বাবলম্বী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পুরাতন যেসব রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট রয়েছে, সেগুলো যেন ভাঙা অবস্থায় না থাকে। অর্থাৎ আগের অবস্থায় যেন ফিরে যায়। সড়ক উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- জরুরি সহায়তা প্রকল্প বিআরবি অংশ (কক্সবাজার আশ্রয়গ্রহণকারী বা বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন) প্রকল্প (১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা); রুর‌্যাল কানেটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি) প্রকল্প (৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা); বাংলাদেশ ইমারজেন্সি অ্যাসিসট্যান্স (এলইডি অংশ) প্রকল্প (২৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প (১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা); কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইন উপজেলায় নির্মিতব্য মিঠাইন সেনা উপস্থাপনার ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্প (৩০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা); চট্টগ্রাম জেলার রাঙুগুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলি ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প (৩৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা); রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প (১৬৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা); ক্রস বর্ডার রোড নেটওর্য়াক ইমপ্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্প (৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা); গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নতিকরণ প্রকল্প (৮৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা)।
এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা; খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা; দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত ৪৬টি) উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; শহীদ এম. এনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়ি বাঁধ প্রতিরক্ষা ও নিষ্কাশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।