চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আজ থেকে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ

458

চাঁদপুর, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় মৎস সম্পদ ইলিশ প্রজনন রক্ষায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আজ রোববার ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন অভয়ারশ্রম এলাকায় মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, পরিবহন ও সরবরাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০১৭ সালে ১ অক্টেবর থেকে ২২ দিন এসব এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। চলতি বছর প্রজনন মৌসুম আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর করা হয়েছে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত চাঁদপুর জেলা ট্রাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। অভয়াশ্রম চলাকালে এসব নদীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে নদীতে ২৪ ঘন্টা কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের টিমের অভিযান চলবে। এ ছাড়া ও অভিযানে এসব এলাকায় মাছ আহরণ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত ইলিশ জেলে রয়েছে। এসব জেলেরা এ ২২ দিন যাতে করে নদীতে মাছ না ধরেন, সেই জন্য তাদেরকে ইতোমধ্যে মাইকিং করে ও লিফলেট বিতরণ করে সচেতন করা হয়েছে। মৎস্য আড়ৎ এলাকায় জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
চাঁদপুর সদরের হরিনা বাজার এলাকার জেলে আমিন হাওলাদার ও জিতু হাওলাদার জানান, তারা বছরের সব সময়ই নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার করেন। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষিত নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন তারা মাছ আহরণ করবেন না। কিন্তু তাদেরকে ২২ দিনের জন্য যে ২০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে, তাদের মাছ ধরার নৌকাগুলো যেন ২২ দিন খাল ও পুকুরে উঠিয়ে রাখে। কারণ ইলিশ এ সময়ে মিঠা পানিতে নিরাপদ স্থান হিসেবে ডিম ছাড়তে আসে। একটি ইলিশ কমপক্ষে ২২ লাখ ডিম ছাড়ে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষক ড. মাসুদ হোসেন খাঁন বাসসকে জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে এ অভিযানের ফলে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১ কেজি ডিম উৎপাদন হয়। ফলে ৩৯ হাজার ২৬৮ কেজি জাটকা যুক্ত হয়, সর্বোপরি জেলেরা ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করে।
তিনি বলেন, এ বছর (১৭-১৮ অর্থ বছরে) ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়াবে। শুধু ইলিশই নয়, নদীর অন্যান্য যেসব মাছ রয়েছে সেসব মাছ নদীর মোহনায় ডিম ছাড়বে এতে ইলিশের পাশা-পাশি নদীর অন্যান্য প্রজাতির মাছও বৃদ্ধি পাবে।
ড. মাসুদ হোসেন আরো জানান, ২০১৭ সালে ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এ সব নদীতে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এ বছর এ সময় আরো ৬দিন বাড়িয়ে ৬ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর কারণ হলো এ ২২ দিনের মধ্যে একটি অমাবশ্যা ও একটি পূর্ণিমা রয়েছে। সাধারণত যেকোন প্রজাতির মাছ অমবশ্যা ও পূর্ণিমায় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মিষ্টি পানিতে নদীর মোহনায় চলে আসে। তাই সময়টা ১ অক্টেবরের পরিবর্তে ৬ অক্টোবর রাত ১২ থেকে সকল মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়টা চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ইলিশ গবেষক) ড. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নোয়াখালির হাতিয়া, ভোলা, চাঁদপুর নদীর মোহনায় ইলিশ মাছের ডিম ছাড়ার প্রকৃতির উপর গবেষণা করবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, গত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কয়েকটি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের ১শ’ কিলোমিটার এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো জানান, জাতীয় মৎস সম্পদ ইলিশ রক্ষা এবং নিরাপদে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য জেলা ট্রাস্কফোর্স সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আর এ ২২ দিন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টাগার্ড, জেলা মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ২৪ ঘন্টা রুটিন অনুযায়ী নদীতে দায়িত্ব পালন করবে। অভয়াশ্রম এলাকার সকল জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলেদেরকে নিয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। জেলা মৎস্য বিভাগ ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য জেলে পাড়াগুলোতে মাইকিং করেছে ।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বাসসকে জানান, সরকার জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সফল অভিযান পরিচালনা করায় মানুষ আবার ইলিশ উৎপাদনের সুফল পেতে শুরু করেছে। কাজেই এবারের নিষেধাজ্ঞার সময় সবাইকে মা ইলিশ রক্ষার আন্দোলনে নামতে হবে। তিনি বলেন, কোন নৌকা নদীতে নামতে দেয়া হবেনা। এজন্য নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ বাহিনী, আমাদের সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এ্যাসিল্যান্ডদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন জিরো টলারেন্স দেখাবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।