ভোলার মাছঘাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে

470

ভোলা, ৩ মে, ২০১৮ (বাসস) : দীর্ঘ ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পুনরায় জমজমাট হয়ে উঠেছে জেলার বিভিন্ন মাছঘাট ও মৎস্য আড়ৎগুলো। মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভায়শ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে সব ধরনের মৎস্য শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর শেষ হলে জেলেরাও নদীতে নেমে পড়ে নতুন উদ্যমে। লম্বা বিরতির পর জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে মাছের আড়ৎগুলো। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে জেলে পাড়ায়। জেলে ও ব্যাপারীদের হাঁক-ডাকে মুখরিত হচ্ছে মাছের ঘাটগুলো।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছের ঘাট, নাছির মাঝি মাছঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যাসনের চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন মাছের মোকাম ঘুরে দেখা যায়, মৎস্য ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। কেউ বরফ তৈরি করছেন, কেউ ঝুঁড়ি প্রস্তুত করছেন, কেউবা গদিতে মাছ তুলে দাম হাকাচ্ছেন। সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা ঘাটগুলোতে চকচকে রুপালী ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ নিয়ে আসে জেলেরা। আর মাছ আসলেই হাঁক-ডাক দিতে থাকে ব্যাপারীরা।
সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো: মাইনুদ্দিন মেম্বার আজ বাসস’কে বলেন, তাদের এ ঘাটে ১৫টি মাছের আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়ৎ’র শ্রমিক ও মালিকরা গত ২ মাস অলস সময় পার করার পর বুধবার থেকে ফের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তবে পোয়া, টেংরা, বাটাসহ মিশ্র মাছ ধরা পড়লেও ইলিশ কম আসছে বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী মো: আলআমিন বলেন, সরকারের ইলিশ সংরক্ষণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। এবছরও ডিমওয়ালা মাছসহ জাটকা রক্ষা কার্যক্রম’র ফলে ব্যাপক ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে আরো ২/১ মাস অপেক্ষা করতে হবে তার জন্য।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম আজ বাসস’কে জানান, মার্চ ও এপ্রিল ২ মাস অভায়শ্রমে কঠোরভাবে পালিত হয়েছে ইলিশসহ সব ধরেনের মৎস্য রক্ষা কার্যক্রম। ফলে এবছর ২০ ভাগ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫২ হাজার ১৫০টি জেলে পরিবারের জন্য মোট ৮ হাজার ৩৪৪ মে:টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আইন ভঙ্গ করার দায়ে আড়াই’শর বেশি জেলের জেল ও ১৫ লাখ মিটারের অধিক জাল নষ্ট করা হয়েছে। সকলের সহায়তায় এবছর অনেকটা বিরত ছিলো জেলেরা মৎস্য শিকার থেকে।
ইলিশা এলাকার চডার মাথা মাছঘাটের আড়ৎদার মো: আলাউদ্দিন বলেন, তাদের ঘাটের ২০টি আড়দে প্রায় ১২০ জন মানুষ কাজ করেন। গত ২ মাস বসে থাকার পর অবশেষে জমজমাট হয়ে উঠছে তাদের আড়ৎ। বর্ষার সাথে সাথে মাছের আমদানি আরো বাড়বে।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতি হালি দেড় হাজার থেকে ১৭শ’ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩ হাজার টাকা এবং এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিম প্রতি হালি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছ ঢাকা, বরিশাল হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। বর্তমানে দাম একটু বেশি থাকলেও বেশি মাছ ধরা পড়লে দাম কমতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, জেলার নিবন্ধিত ১ লাখ ২৫ হাজার জেলেসহ মোট প্রায় ৪ লাখ জেলে বর্তমানে মৎস্য শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অধিকাংশ জেলেই ধার-দেনা করে নদীতে জাল ফেলছেন। তাই প্রকৃত জেলে ও সঠিক সময়ে সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানান জেলেদের এ নেতা।
এদিকে টানা দুই মাস নদীর মাছের আকাল কাটিয়ে স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছে ভরপুর হচ্ছে। গত ২দিনে বিভিন্ন নদ-নদীর মাছের আমদানি বাড়ছে বাজারে। এতে করে স্বস্তি ফিরে এসেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে। বিক্রেতারা ইলিশসহ বিভিন্ন মিশ্র মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রির জন্য। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষা-কষিতে মুখরিত স্থানীয় হাট-বাজারগুলো।