হবিগঞ্জ উন্নয়ন মেলায় নজর কেড়েছে জিরো এনার্জি কুল চেম্বার

618

হবিগঞ্জ, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : সবজির মৌসুমে সংরক্ষণের অভাবে কম দামে ফসল বিক্রি করতে হয় কৃষকদেরকে। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই কৃষকদের। কিছু সময় এ সবজি সংরক্ষণ করে প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়ার জন্য কোন উপায় জানাছিল না কৃষকদের। হবিগঞ্জের উন্নয়ন মেলায় এ সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে ‘জিরো এনার্জি কুল চেম্বার’ নামে একটি প্রযুক্তির প্রদর্শনী করেছে জেলা বিপণন অফিস। এ প্রযুক্তি সবার নজর কেড়েছে। কৃষকদের মাঝে সৃষ্টি করেছে নতুন আগ্রহ।
জিরো এনার্জি কুল চেম্বার প্রযুক্তিতে যেমন কোন বিদ্যুৎ খরচ নেই তেমনিভাবে এটি তৈরিতেও খরচ মোটামুটি কম। এ প্রযুক্তিতে কোনও ফ্রিজ কিংবা কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াই সংরক্ষণ করা যায় শাক-সবজি। পচন ধরা তো দূরে থাক, সবজি কাটার পরও ৭দিন বাড়িতেই টাটকা থাকছে কাঁচা সবজি। বিক্রি না হলেও ক্ষতির ঝুঁকি নেই। বিশেষ করে টমেটো, শশা, ভেন্ডি, মরিচ পটল, ঝিঙ্গে, বেগুন থেকে পালং শাক পর্যন্ত সব কিছুই থাকবে একেবারে টাটকা। জমি থেকে তোলার পর তা রেখে দিতে হবে এ কুল চেম্বারে। কোনও বিদ্যুৎ শক্তি কিংবা রাসায়নিক ব্যবহার না করেই সতেজ থাকবে ফসল। এটি পরিবেশ বান্ধব ও শতভাগ স্বাস্থ্য সম্মত প্রযুক্তি বলে দাবি করেছেন জেলা বিপণন কর্মকর্তা মো. ইকবাল মাহমুদ খান।
জেলা বিপণন কর্মকর্তা মো. ইকবাল মাহমুদ খান জানান, অনেক সময় কৃষকরা মাঠ থেকে সবজি তুলে আনেন। এ সবজি সঠিক সময়ে ক্রেতাদের কাছে বা পাইকারি বাজারে না পাঠানোর ফলে ঘরে পচে নষ্ট হয়। বিশেষ করে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকদের হিমঘরে সবজি মজুত রাখা বা বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকাতেই বাড়িতেই রাখতে হয়। ফলে শুকিয়ে যাওয়া সবজি কিনতে চান না কেউই। তাই কৃষকদের ক্ষতি কমাতেই এ পদ্ধতি বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তা এখনও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়নি। হবিগঞ্জের উন্নয়ন মেলায় প্রযুক্তিটি দেখে অনেকেরই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইট দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের চেম্বার বানানো হয়। দু’টি স্তরে ইঁটের দেওয়াল তৈরি করে মাঝে সবজি রাখার জায়গা তৈরি করা হয়। দু’টি দেওয়ালের মাঝে বালি দিয়ে ভরাট করতে হয়। কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করার পরই সেই মাঝের বালির অংশে পানি দিতে হবে। ফলে বাইরের তাপমাত্রা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকবে চেম্বারের ভিতরে। সেখানেই কয়েকশ’ কেজি পর্যন্ত ফসল রাখা যেতে পারে। একটি প্রকল্পে ৮টি ক্যারেট ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ক্যারেটে ২০ থেকে ২৫ কেজি সবজি রাখা যায়। একটি প্রকল্প তৈরি করতে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। একটি প্রকল্প ৪/৫ বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিতে পারে। সেখানে আর কোন খরচের প্রয়োজন হয় না।
হবিগঞ্জ বিপণন অফিসের গ্রেডার ইনচার্জ আবুল কালাম শিকদার জানান, হবিগঞ্জে ইতোমধ্যে ১০/১২টি জিরো এনার্জি কুল চেম্বার প্রকল্প চালু হয়েছে। হবিগঞ্জ শহরতলীর নারায়নপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম নামের এক কৃষক এই প্রযুক্তির সুফল ভোগ করছেন। বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া এবং প্রতিটি উপজেলায় অন্ততপক্ষে একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো দেখে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু সংরক্ষনের অভাবে অনেক সময় পানির দরে সবজি বিক্রি করতে হত। এখন জিরো এনার্জি কুল চেম্বার করায় সব্জি সংরক্ষণ করে বাজারের অবস্থা যাছাই করে সবজি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তার এ প্রকল্প দেখে অন্যান্য কৃষকরাও এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সহযোগিতা করছেন।
শুক্রবার মেলায় ঘুরতে আসা শায়েস্তাগঞ্জের সুমন মিয়া নামে এক যুবক বলেন, এ প্রযুক্তিটি তার ভাল লেগেছে। নিজের খামারের জন্য এ ধরনের একটি চেম্বার তিনি নির্মাণ করতে আগ্রহী। তাই তিনি এ ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে গেছেন।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তোফায়েল খান বলেন,এ প্রযুক্তির ব্যবহারে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এ প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, ফল ও সবজি উচ্চমূল্যসম্পন্ন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ফসল। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুর্ন রাখতে নিয়মিত ফল ও সবজি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ফজলুল জাহিদ পাভেল জানান, উন্নয়ন মেলায় সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্য সরবরাহের পাশাপাশি সরাসরি বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মাঝে একটি প্রযুক্তি বিশেষভাবে সবার নজরে আসাটা উন্নয়ন মেলার স্বার্থকতা। আগামীতে এ ধরনের উদ্ভাবনী বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে।