বাজিস-৮ : দেবীগঞ্জ ময়নামতি চর হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র

240

বাজিস-৮
পঞ্চগড়- ময়নামতি চর
দেবীগঞ্জ ময়নামতি চর হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র
পঞ্চগড়, ২ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ এর নামকরণ নিয়ে দুইটি মত প্রচিলিত আছে। একটি মত হলো, এ জনপদটি পূর্বে হিন্দু অধ্যুসিত ছিল। এখানে অনেক দেব-দেবীর মুর্তি পাওয়া যেত। এ সব দেবী-দেবীর নাম থেকে দেবীগঞ্জ নামটি হতে পারে। অপর মতটি হলো, সন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী- দেবী চৌধুরানীর অবাধ বিচরণ স্থল ছিল এ এলাকাটি। এখানকার ঘন বণাঞ্চলে প্রবাহিত করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়–ম নদীর বাঁকে বাঁকে বৃটিশদের সাথে কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে বিজয়ী হন এবং এখানকার অধিবাসীদের আশা-ভরসা ও শৌর্য বীর্যেও প্রতীক হয়ে উঠেন। দেবী চৌধরানীর স্মৃতি থেকে এর নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ।
দেবীগঞ্জ সহ পঞ্চগড় জনপদ ছিল কোচবিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। ১৭১১ সালে মোঘল ও কোচবিহার রাজার মধ্যে সন্ধি হয়। রাজা রূপ-নারায়ন কোচবিহার রাজ্য সন্ধিসূত্রে লাভ করেন। ১৭৭৬ সালে মোঘলদের ফকিরকুন্তি নামক ফৌজদারী অঞ্চল প্রাচীন রংপুর জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৫৭ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে তিনটি মহকুমা সৃষ্ঠি করা হয় এবং এর সর্ব উত্তরের মহকুমার নাম হয় তেঁতুলিয়া। এ তেঁতুলিয়া মহকুমার মধ্যে ছিল বোদা চাকলা এবং দেবীগঞ্জ জনপদ ছিল বোদা চাকলার অধীন।
১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও মহকুমার আটোয়ারী থানাসহ ৫টি থানা নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় জেলা গঠিত হয় ও দেবীগঞ্জ উপজেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর দেবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে, যার মধ্যে ঐতিহাসিক ময়নামতি চর, খয়ের বাগান এবং জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ী, ৪র্থ চীন বাংলাদেশ মৈত্রি সেতু, ডিসি পার্ক। মনোমুগ্ধকর স্থান, যার নাম ময়নামতি চর। সরকারী ও সংশ্লিষ্ট মহলের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বা পিকনিক স্পট হতে পারে দেবীগঞ্জের এ ময়নামতি চর। তার সাথে সরকারের আয় বাড়বে। ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে গাছ-গাছালি ঘেরা ময়নামতিচরের মনোরোম পরিবেশের আকর্ষণে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় অবস্থিত দেবীগঞ্জ উপজেলা। উপজেলার পূর্বে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা, পশ্চিমে বোদা উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, উত্তরে পঞ্চগড় সদর ও ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা,দক্ষিণে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলা এবং নীলফামারী জেলা অবস্থিত। সড়ক পথে- ঢাকা থেকে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় মহসড়ক পথে রংপুর পর্যন্ত এবং রংপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার আসলে সৈয়দপুর এবং সৈয়দপুর থেকে উত্তর মুখো হয়ে নীলফামারী জেলা এবং নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা থেকে ০৬ কিঃমিঃ পশ্চিম উত্তর দিকে আসলে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
দেবীগঞ্জ ঃ পঞ্চগড় থেকে জাতীয় মহাসড়ক পথে ২০কিঃমিঃ আসলে বোদা উপজেলা এবং বোদা থেকে পূর্ব দিকে ২০কিঃমিঃ আসলে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
দেবীগঞ্জ ঃ দিনাজপুর থেকে মহাসড়ক পথে ২০কিঃমিঃ আসলে বীরগঞ্জ উপজেলা, বীরগঞ্জ থেকে ২০কিঃমিঃ উত্তরে ঝাড়বাড়ী নামক বাজার থেকে১২কিঃমিঃ কালিগঞ্জ বাজর থেকে ১৩কিঃমিঃ উত্তরে আসলে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে নদীবেষ্ঠিত ময়নামতি চর প্রায় ৪০ একর জমির উপর নিমিত্ত একটি দ্বীপ মনে হবে । ময়নামতি চরে বিভিন্ন গাছ-গাছালী দিয়ে ভরা বাগান, বাগানের চতুর পার্শ্বে পাকাঁ রাস্তা যা গটা ময়নামতি চর কে প্রকৃতিক সৌন্দর্য ভরা যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ময়নামতি চরের পশ্চিমে কোলঘেঁষে করতোয়া নদী , উত্তরে চা বাগান, দক্ষিণে আবাদি জায়গা ও পূর্বে আবাদি জায়গা।
গত বছর এ ময়নামতি চরে দশম জাতীয় রোভারমুট ও কমডেকা আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা । উক্ত রোভারমুট ও কমডেকা অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার স্কুল,কলেজ এবং দেশের বাইরের ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তানসহ আরোও কয়েকটি দেশের স্কাউট দল ।
খর¯্রােতা করতোয়ার কোল ঘেঁষে বিশাল উচু দ্বীপটি আপনার হৃদয়কে ছুঁয়ে যাবে। নয়নাভিরাম চোখে ময়নামতি চরে শিশু, আকাশমনি, দেশি কড়াই, আমলকি, মেহগণি, আম, জাম, কাঁঠাল, বেল সহ নানা জাতের ২৫০০০ হাজার গাছ আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যর পাশা-পাশি ময়নামতি চরে বসার জন্য সিমেন্টের বেঞ্চ তৈরি করা আছে অনেক গুলো, ময়নামতি চরে পাকা রাস্তা আছে । তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ মানসিক প্রশান্তির জন্য বা পিকনিক করতে এখানে আসেন ও সুন্দর সময় কাটিয়ে ফিরে যান।
সরকারী ও সংশ্লি¬ষ্ট মহলের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বা পিকনিক স্পট হতে পারে দেবীগঞ্জের এ ময়নামতি চর। তার সাথে সরকারের আয় বাড়বে।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১৪১০/নূসী