ঐতিহাসিক নাটক ‘মহাস্থান’ মঞ্চস্থ হলো

458

ঢাকা, ৩০ এপিল, ২০১৮ (বাসস) : বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাস উপস্থাপন করা হলো ‘মহাস্থান’ নাটকে। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে সময়ের পরম্পরায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পর্যন্ত সময়কালকে এতে একক গ্রন্থনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাটকে প্রাচীন শিকারযুগ থেকে শুরু করে বৈদিকযুগ, আদিবাসি পর্ব, রামায়নের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, সুফিসামা, বৈষ্ণব পদাবলী, ব্রাহ্মসংগীত, লোকগান, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ব্রতচারীদের গান, পঞ্চকবির গান উঠে এসেছে।
এ ছাড়া ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস, কাব্য-গীত ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা পালাগানরূপে এ নাটকে রূপায়িত হয়েছে। নাটকটি রচনা করেছেন ড. সেলিম মোজাহার। নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যব্যাক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় ইতিহাসনির্ভর নাটক ‘মহাস্থান’ এর কারিগরি প্রদশর্নী অনুষ্ঠিত হয় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রযোজনা এ নাটক বিপুল সংখ্যক দর্শক উপভোগ করেন।
নাটকের নির্দেশক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী নাটক প্রদর্শনি শুরুর আগে বলেন, নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাস ও ঐতিহ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি আমাদের যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের আলোকিত অধ্যায় রয়েছে, সেটাই মহাস্থান নাটকের মধ্যদিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের যে প্রাচুর্যময় সম্ভার রয়েছে, প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশনসমূহ তার মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক স্থান নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতœনাটক করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ নাটকটি তার অংশ হিসেবে একাডেমি দেশবাসির কাছে উপস্থাপিত হলো।
প্রাচীর বেষ্টিত মহাস্থান নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন সময়ের নানা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাμমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা এখানে রাজত্ব করেছিলো। ‘মহাস্থান’ প্রতœনাটকের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন সময়ের শাসন শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই স্থানটি একসময় ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবেও পরিণত হয়েছিলো। ধর্মের বাণী বুকে নিয়ে কেউ মানবতার কথা বলেছেন কেউ আবার মানুষের অধিকার নষ্ট করেছেন। এসব কীর্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ‘মহাস্থান’ নাটকে।
ড. সেলিম মোজাহার বলেন, ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ের আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে প্রতœনাটক ‘মহাস্থান’ । এটি মঞ্চায়নের মধ্যদিয়ে শিল্পকলা একাডেমি বড় পরিসরের নাটকের আর একটি কাজ সম্পন্ন করলো। বর্তমান প্রজন্মের মানুষ নাটকটি উপভোগ করে তারা নিজেদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।
দীর্ঘ ছয় মাসের মহড়া শেষে কারিগরি মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হলো নাটকটির। একাডেমির চিত্রশালার ২০ হাজার বর্গ ফুট স্থান ছিল নাটকের কেনভাস। তিনশতাধিক শিল্পী ও কলা-কুশলী এতে অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার শিল্পী দেড় শতাধিক এবং বগুড়ার বিভিন্ন সংগঠনের গান, নৃত্য, অভিনয়, যন্ত্রী, কলাকুশলীসহ দেড়শত শিল্পী। দুই ঘন্টা বিশ মিনিটের নাটকে বিভিন্ন যুগের অসংখ্য গান, জারি-সারিও এতে সংযোজন ঘটেছে।