ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট সময়ে আন্তঃদেশীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত : নারায়ণ চন্দ্র চন্দ

411

ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, মা ইলিশ সুরক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের যেসব দেশে ইলিশ উৎপাদন হয় সেখানে বাংলাদেশের মতো নির্দিষ্ট সময়ে আন্তঃদেশীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। তাহলে ইলিশের উৎপাদন ও প্রাচুর্য্যতা বৃদ্ধি পাবে।
তিন দিনব্যাপি ‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০১৮’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একথা বলেন।
আন্তজার্তিক পর্যটন দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেসরকারি সংগঠন ‘পদক্ষেপ বাংলাদেশ’ রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে আজ এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২দিন প্রজনন ক্ষেত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় (নদ-নদী, মোহনা ও উপকূলীয় এলাকা) ইলিশসহ সব ধরণের মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে এসব এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাগুলোয়ও এই ২২দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। ইলিশ ধরা রোধকল্পে দেশের মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২২দিন অভিযানও পরিচালিত হবে।
মন্ত্রী জেলে সম্প্রদায়, মৎস্য সমিতি, সধারণ জনগণসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের এ সময় সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহবান জানান।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে এক দশকে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ৬৬ ভাগ বেড়েছে।
‘মৎস্য খাতে বাংলাদেশে বিপ্লব হয়েছে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ইলিশ এখন বাংলাদেশের একক সম্পদ। গতবছর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৪ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। অথচ ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে এই উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইলিশকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের মাছও ইলিশ। তেমনি ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বজুড়েও এই মাছটি জনপ্রিয়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার ইলিশ খুবই লোভনীয়। অনেক আগে দেশে ইলিশের প্রাচুর্য্য ছিল। কিন্তু বিগত সময়ে আমাদের অপরিনামদর্শী আচরণের কারণে ইলিশ হারিয়ে যেতে বসেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় নানামুখি কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ইলিশের সবচেয়ে বড় আধার বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ইলিশ আহরণের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। এর বার্ষিক উৎপাদন এবার ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। জিডিপিতেও ইলিশের অবদান প্রায় শতকরা ১ ভাগ। বর্তমানে প্রতি বছরই বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশই প্রথম।
‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০১৮’-এর আহ্বায়ক, বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ মস আরেফিন সিদ্দিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিশু সাহিত্যিক ফারুক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন পদক্ষেপ বাংলাদেশের সভাপতি কবি বাদল চৌধুরী। পরিচালনা করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন নিসা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারত থেকে আসা কবি কাজল চক্রবর্তী, সকিল আহমেদ,তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, শান্তিময় মুখোপাধ্যায়, নীপা চক্রবর্তী, দিপেন ভাদুরি ও পুস্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, আগামিকাল নৌ-বিহার ও বাংলা মায়ের রূপ-বৈচিত্রে পরিভ্রমণ এবং শনিবার বেলা ১১টায় চাঁদপুরের বড়স্টেশনের মোলহেডে উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।