শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন : রাষ্ট্র প্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণের আশাবাদ

550

নিউইয়র্ক, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮(বাসস) : বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানগণ বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবেন বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন। তারা বুধবার বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকেদের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘সার্বিকভাবে সকলেই আশা প্রকাশ করেছেন যে, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতৃত্বে বহাল থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বুধবার রাতে নিউ ইয়র্কস্থ হোটেল গ্রান্ড হায়াতে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী এদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে পৃথকভাবে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ, ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনেরিয়েটা ফোর, মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ফেডেরিকা মঘেরনিনির সঙ্গে বৈঠক করেন।
পাশাপাশি তিনি এদিন জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি ‘সিওপি-২৪’ বাস্তবায়ন বিষয়ে সদস্যদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করে বৈঠকে তাঁরা বলেন, আমরা আবারো আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের মাঝে পাবো।
শহীদুল হক বলেন, তাঁর সময়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভূমিকা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঐক্য-সংহতির কথা বিবেচনা করেই বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান এবং আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমূহ এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব জনমতের এই ধারণা তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বেরিয়ে আসে যে, তাঁরা মনে করছেন আগামী বছরও তাঁরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন, যোগ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্র প্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন উভয়েই একযোগে চলবে।
তিনি বলেন,‘তাঁরা আগামীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুনরায় দেখা হবার আশাবাদও ব্যক্ত করেন।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা আরো আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে শুরু করেছেন তা অব্যাহত থাকবে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এবং দেশে বিদ্যমান গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে বিদ্যমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা তুলে ধরে মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে দ্রততার সঙ্গে ফেরত নেয় সেজন্য তাদের প্রতি চাপ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশে নেই, বরং মিয়ানমার সরকারকেই এবই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
এজন্য তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজের মাতৃভূমিতে ফেরত যাচ্ছে সেই সময়টায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য নিয়ে তাদের দেখোশোনা করবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে এ বিষয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি তালিকায় ৪ হাজার রোহিঙ্গার নাম সনাক্ত করা হয়েছে, আসুন এদের মাধ্যমেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাক।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দু’টি দেশই সফর করেছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে পারে সেজন্য রাখাইন রাজ্যে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তিনি মিয়ানমারকে বোঝাতে সক্ষম হবেন।
এই সমস্যার সমাধানে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলেও জানান।
বার্গেনার বলেন, গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মিয়ানমার বিষয়ে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব করে তার একটি ছিল মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের অন্তর্ভূক্তি।
তিনি বলেন, ঐ পদে তাঁর নিযুক্তির মাধ্যমেই সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্র প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও ভূয়শী প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা কি করে সম্ভব হলো তাঁরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও জানতে চান।
তারা এ সময় এ বছরের ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির উল্লেখ করে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও এটি দেশটির উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি।