বাসস ক্রীড়া-৯ : পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিশোধের মোক্ষম সুযোগ বাংলাদেশের

163

বাসস ক্রীড়া-৯
ক্রিকেট-এশিয়া কাপ
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিশোধের মোক্ষম সুযোগ বাংলাদেশের
আবুধাবি, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের ফল দুঃস্মৃতি হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস লিপিবদ্ধ। কারণ, ফাইনালে মাত্র ২ রানে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ। শিরোপা জিততে না পারার দুঃখে এখনো পুড়ছে বাংলাদেশ। তবে সেই দুঃখ কিছুটা ভোলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। আর সেটি এশিয়া কাপের মঞ্চেই। এশিয়া কাপের চলতি আসরে সুপার ফোর-এর শেষ ম্যাচে আগামীকাল পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচের বিজয়ী দলই খেলবে এবারের আসরের ফাইনাল। সেদিক বিবেচনায় ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনালও বটে। তাই পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেতে উদগ্রীব বাংলাদেশ। তবেই ২০১২ সালের আসরের ফাইনালে হারের প্রতিশোধও নেয়া হয়ে যাবে টাইগারদের। আবুধাবিতে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে চলমান এশিয়ার কাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুপার ফোরের লড়াই।
১৯৮৬ সাল থেকে এশিয়া কাপ খেলে আসছে বাংলাদেশ। নিজেদের মাটিতে ২০১২ আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে টাইগাররা। শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলো মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে সাকিব-মুশফিকদের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ায় পাকিস্তান। ফাইনালে মাত্র ২ রানে হেরে সেদিন অঝোর ধারায় কেঁদেছেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-নাসিররা।
ফাইনাল হারের সেই দুঃস্মৃতি আজো বেশ টাটকা। এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই পেলেই ছয় বছর আগের স্মৃতি চোখে ভেসে ওঠে ক্রিকেটপ্রেমিদের। ফাইনালের ওই ম্যাচটি যতটা গুরুত্ব ছিলো, আগামীকালের ম্যাচটিও ততটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ম্যাচের ফলের ওপরই নির্ভর করছে ১৪তম আসরের ফাইনালে উঠবে কোন দল- বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান।
পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোর মিলিয়ে চার ম্যাচের দু’টিতে জিতেছে টাইগাররা। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে যায় তারা। কিন্তু সেই হার খুব বেশি ক্ষতি করেনি বাংলাদেশকে। কারণ, সুপার ফোর পর্বে খেলার ছাড়পত্র হাতে ছিলো মাশরাফি-সাকিবদের।
সুপার ফোর-এ ভারতের সাথে পেরে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না বাংলাদেশের। সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশকে পাস মার্ক এনে দেন মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস ও মুস্তাফিজুর রহমান।
আবুুধাবিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১২৮ রানের নান্দনিক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি এনে দেন মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুল। এশিয়ার কাপের জন্য প্রথমে ঘোষিত দলে ছিলেন না ইমরুল। হঠাৎই টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলে সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চেনান প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে দলের হয়ে খেলতে নামা ইমরুল। মাহমুদুল্লাহ ৭৪ রানে ফিরলেও, অপরাজিত ৭২ রান করেন ইমরুল।
২৪৯ রানের পুঁজি নিয়ে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ভালোভাবেই লড়াই করতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে শেষদিকে ম্যাচের লাগাম কিছুটা নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় আফগানরা। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৮ রান দরকার পড়ে আফগানিস্তানের। অধিনায়ক মাশরাফি শেষ ওভার বোলিং করার জন্য গুরুদায়িত্ব তুলে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের হাতে। হতাশ করেননি তিনি। ওই ওভারে মাত্র ৪ রান দেন ফিজ। ফলে ৩ রানে ম্যাচ জিতে ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ।
ফাইনালে যেতে হলে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে আগামীকাল পাকিস্তানকে হারাতেই হবে বাংলাদেশকে। তবে শুধুমাত্র পারফরমেন্স দিয়েই নয়, ভাগ্য সাথে থাকলে জয় সম্ভব বলে মনে করেন মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যেমন ক্রিস গেইল যেদিন ভালো খেলে সেদিন আর কিছু করার থাকে না। তেমনি পাকিস্তানের বেলাতেও একই। তারা যেদিন খেলে, সেদিন কাউকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু ভাগ্য যদি আমাদের পক্ষে থাকে তাহলে তাদের জন্য দিনটি উল্টো হবে। আমাদের ভাগ্যে না থাকলে নাই।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়েরপর বাংলাদেশ দল বেশ ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের কারণে আমরা এখন ভালো অবস্থায় রয়েছি। পরের ম্যাচে ভালো খেলতে আমরা সাহস পাবো। এ ছাড়া আমরা জানি, পরের ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল খেলতে পারবো। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকেবে ভালো পাপরফরমেন্স করা এবং দলের সবাই এ জন্য উদ্গ্রীব।’
গ্রুপ-পর্বে হংকং ও সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় পাকিস্তান। কিন্তু দু’পর্বেই ভারতের কাছে নাস্তানবুদ হয় পাকিস্তান। এক কথায়, ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। তাই পাকিস্তান দলকে নিয়ে শংকিত দেশটির সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের এই দল নিয়ে আমি বেশ শংকিত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে তাদের।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি যে চ্যালেঞ্জের, সেটি মানছেন পাকিস্তানের ওপেনার ইমাম-উল হকও। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য পরের ম্যাচটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। আমাদের আরো ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। দলের সবাই ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
এশিয়া কাপে ও ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১২বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সবগুলো ম্যাচই জিতেছে পাকিস্তান। তবে এশিয়া কাপের টি-২০ ফরম্যাটে একবারের সাক্ষাতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৩৫ লড়াইয়ে ৩১টিতে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ৪টিতে জয় বাংলাদেশের। এরমধ্যে তিনটিই এসেছে সর্বশেষ সাক্ষাতে। সেটি ছিলো ২০১৫ সালে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোমিনুল হক।
পাকিস্তান দল : সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), ফখর জামান, ইমাম উল হক, শান মাসুদ, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী, হারিস সোহেল, শাদাব খান, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলী, মোহাম্মদ আমির, জুনাইদ খান, উসমান সিনওয়ারি ও শাহিন আফ্রিদি।
বাসস/এএমটি/১৭৩০/-স্বব