বাসস দেশ-২৩ : শিক্ষামান উন্নয়নে এসডিজি-৪ অর্জনে শিক্ষাবিদদের আহবান

385

বাসস দেশ-২৩
এসডিজি-লক্ষ্য
শিক্ষামান উন্নয়নে এসডিজি-৪ অর্জনে শিক্ষাবিদদের আহবান
ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা সকলের জন্য ইনক্লুসিভ সমমানের শিক্ষা এবং আজীবন শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-৪ অর্জনের উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।
শিক্ষাবিদরা বাসস’র সাথে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক সুবিধা বঞ্চিত শিশু তাদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এসডিজি-৪ বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের জন্য অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের (সিএএমপিই) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এসডিজি-৪-এর লক্ষ্য হচ্ছে সাধারন শিক্ষা, কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা, তরুণ ও বয়স্কদের দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগনের সাক্ষরতা, শিক্ষায় অংশগ্রহণ ও সমতা, শিক্ষা এবং শিক্ষকের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা যদি পেছন ফিরে ইএফএ (সকলের জন্য শিক্ষা) এবং এমডিজি (সহস্্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য)-এর দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও এক-পঞ্চমাংশের বেশি শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের আগেই ঝরে পড়ায় পাচ বছরে মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেনি।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থীর বয়স ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে । মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) সম্পন্ন করে। স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক কর্মমুখি শিক্ষা গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা একটি চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের হার কম। প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। এমডিজি’র অসমাপ্ত এজেন্ডাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা যদি ২০৩০ সালের মদ্যে এসডিজি-৪-এর লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করতে হবে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে রাজনৈতিক অঙ্গিকারের প্রয়োজন। শিক্ষা খাতে পযার্প্ত বরাদ্দ এবং এই বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়েছে এবং শিক্ষার মানেরও উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর ভর্তির লক্ষ্য অজর্নের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। দশ বছর আগের ৪০ শতাংশ ঝরে পড়ার হার এখন ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা খাতের জন্য এটি একটি প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। আমরা শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে অনেক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোও শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। তাহলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষা খাতে বাজেটের বর্তমান বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম। তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ কমেছে। তারা বলেছেন, ২০০৭ সালের বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ১৫ শতাংশ ৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৬ সালে ১১ শতাংশ ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্ব উন্নয়ন সূচকে (ডাব্লিউডিআই) তথ্য মতে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশ ৯ শতাংশ। বিশ্বে ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৫তম। ডব্লিউডিআই বলেছে, দক্ষিণ এশিয় দেশসমূহের মধ্যে অধিক বরাদ্দের দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান ৪ শতাংশ ৬ শতাংশ, ভূটান ৫ শতাংশ ৬ শতাংশ, নেপাল ৪ শতাংশ ১ শতাংশ, ভারত ৩ শতাংশ ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তান ২ শতাংশ ৫ শতাংশ।
বাসস/স্পেশাল/এমএমআর/অমি/২০৪০/-কেএমকে