কবি আবু হেনা মোস্তফা কামালের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

502

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর কবি, গীতিকার, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
দেশের সাহিত্য, শিক্ষা,সঙ্গীত ও সংস্কৃতি অঙ্গণের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৮৯ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। সৃষ্টিশীল ও মেধাবী এই কবি ১৯৩৬ সালের ১৩ মার্চ পাবনা শহরের উপকণ্ঠে গোবিন্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শাজাহান আলী ও মা খালেকুননেছা।
তিনি ১৯৫২ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি (বোর্ডে মেধাতালিকায় সপ্তম), ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স), ১৯৫৯ সালে ঢাবি থেকেই বাংলাসাহিত্যে এমএ(প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান) পাস করেন। কমনওয়েলথ স্কলারশিপে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ দ্যা বেঙ্গলী প্রেস অ্যান্ড লিটারেরী রাইটিং ১৮১৮-১৮৩১’ অভিসন্দর্ভ’এর জন্য ১৯৭৭ সালে পিএইচডি লাভ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা ‘ নওবাহার ’ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। বেতার ও টিভিতে গান পরিবেশন করেন। শিক্ষা জীবনে ও শিক্ষকতার পাশপাশি আবু হেনা মোস্তফা কামাল কবিতা, গান, প্রবন্ধ লেখা, গবেষনা, টিভিতে উপস্থাপনা এবং সংস্কৃতি অঙ্গণে নিরলসভাবে কাজ করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সৃষ্টিশীলতা ও নিজস্বতার সাক্ষর রাখেন।
১৯৫৯ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে রাজশাহীর নবাবগঞ্জ কলেজ, রাজশাহী সরকারী কলেজে প্রভাষক, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে,১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি সরকারের জনসংযোগ দফতরে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকার ১৯৮৪ সালে তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও পরে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়।
তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ আপন যৌবন বৈরী ’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ যেহেতু জন্মান্ধ ’ এবং সর্বশেষ কবিতার বই ‘ আক্রান্ত গজল’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী আনিসুজ্জমান ও বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত ‘ আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী’ প্রকাশ করে।তার লেখা ২০৪টি গান নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রকাশ করে ‘ আমি সাগরের নীল’। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় তার পিএইচডি গবেষণার বই ‘ দ্যা বেঙ্গলী প্রেস অ্যান্ড লিটারেরি রাইটিং। ’ তার লেখা অসংখ্য আধুনিক, দেশাত্ববোধক ও চলচ্চিত্রের গান বাংলা সঙ্গীত জগতে চিরায়ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে । তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও গান লিখেছেন।
ড. আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ কবির রচনাবলীর ভূমিকায় তাঁর সৃজনশীলতা বিষয়ে বলেন ‘ শিক্ষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে দেশের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তিনি একাধারে কবি, শিক্ষাবিদ, গীতিকার, সঙ্গীত শিল্পী, অধ্যাপক এবং প্রশাসক। টিভি ব্যক্তিও বটে। প্রায় চল্লিশবছর সাধনায় তিনি বিস্তর ফসল ফলাননি বটে, কিন্তু যা ফলিয়েছেন,তার অধিকাংশই স্বর্ণশস্য। ’ আবু হেনার লেখা গান সম্পর্কে এতে বলা হয় ‘ সঙ্গীতের ধারা ও কলাকৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা আবু হেনার গীতিকার সত্তার বিকাশকে সার্থক করে তুলেছে। রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন গীতিকারদের জগত থেকে হেনা বের হয়ে আসেননি,আবার তিনি এমন সব গান লিখেছেন, যা ভাবে ভাষায় সেই জগত থেকে অনেক দূরবর্তী। ’
আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা কয়েকটি গান হচ্ছে,আমি সাগরের নীল,তুমি যে আমার কবিতা, সেই চম্পা নদীর তীরে,পথে যেতে দেখি আমি যারে,ভ্রমরের পাখনা যত দূরে যাক না,অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে,অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা,এই বাংলার হিজল তমালে।
বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৮৭ সালে সরকার একুশে পদক প্রদান করে। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।