বাজিস-৫ : হবিগঞ্জের হাওরে শালুক এবং পানিফলের বাম্পার ফলন

331

বাজিস-৫
হবিগঞ্জ-বাম্পার-ফলন
হবিগঞ্জের হাওরে শালুক এবং পানিফলের বাম্পার ফলন
॥ শাহ ফখরুজ্জামান ॥
হবিগঞ্জ, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার পানি প্রতিদিনই কমছে। পানি কমার সাথে সাথে মাছের পাশাপাশি লোকজন আহরণ করছেন শালুক এবং পানি ফল। এ বছর হাওরে শালুক এবং পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজিমরীগঞ্জ, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার একাংশের হাওর এলাকা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। এ সময় শাপলা, শালুক, পানিফলসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদে হাওর পরিপূর্ণ থাকে। বর্ষা শেষে শরতের আগমনের সাথে সাথে পানি কমতে থাকে। এ সময় সংগ্রহ করা হয় শালুক, শাপলার ডেপ, পানিফলসহ বিভিন্ন ধরনের মজাদার ফল। এর মাঝে শালুক এবং পানি ফল খুবই জনপ্রিয়।
বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা গ্রামের কৃষক নুর আলী জানান, বর্ষা শেষে যখন হাওরে পানি কমতে থাকে তখন বোরো ফসলের জন্য জমির আগাছ পরিস্কার করার সময় শালুক এবং পানি ফল আহরণ করা হয়। বাজারে এই ফলের কদর থাকায় তারা তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। পাইকারী হিসাবে ২০/৩০ টাকা কেজি হিসাবে শালুক ও পানি ফল বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।
ওই গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, গ্রামে অভাবের সময় অতিদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বিল থেকে শালুক ও পানিফল তুলে এনে সিদ্ধ করে ভাতের বিকল্প হিসেবে খায়। আবার বাজারে নিয়ে বিক্রি করে।
হাওর থেকে সংগ্রহীত শালুক এবং পানি ফল পাইকরারা কিনে এনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে। হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হাট বাজারের বাইরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভ্যান নিয়েও বিক্রি করা হয় এই ফল।
শালুক কিনতে আসা সরকারী বৃন্দাবন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী রুমানা বেগম জানান, শালুক তার প্রিয় খাবার। বাসায় নিয়ে খাওয়ার জন্য তিনি এই ফল কিনেছেন।
হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে শালুক ও পানি ফল বিক্রি করছিলেন, শহরতলীর লুকড়া গ্রামের আব্দুল জলিল। তিনি জানান, হাওর থেকে তারা এই ফল কিনে আনেন। শহরে তারা ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। ক্রেতারা শখ করে এই ফল কিনে নেন বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জে কোন কৃষক শালুক ও পানি ফল আবাদ করে না। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। শালুক শাপলা গাছের গোড়ায় জন্মানো এক ধরনের সবজি জাতীয় খাদ্য। শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়। যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে হয়ে শালুকে পরিণত হয়। । একেকটি শালুকের ওজন সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। এটি সেদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, শালুক হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়। এটি একটি ভালো সবজি হিসেবে সমাদৃত হওয়ার সাথে সাথে চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সরকারী বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাস চন্দ্র দেব জানান, পানিফলকে স্থানীয়ভাবে শিংড়া বা হিংরা নামে পরিচিত। ফলগুলিতে শিংÑএর মতে কাটা থাকে বলে এর শিংড়া নামকরণ করা হয়েছে। এই ফলটি অবাঞ্চিত হলেও বহু এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে। পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। প্রায় ৯০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেড, ৬০ শতাংশ শর্করা আছে এতে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ আঁশ, রাইবোফ্লেবিন, ভিটামিন-বি, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আমিষ, ভিটামিন আছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় পানিফলে খাদ্যশক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১৫ মিলিগ্রাম।
পানিফলের শুধু খাদ্যগুণই না, রয়েছে ওষুধি গুণও। পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ কমে যায়। উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী। বিছাপোকা বা অন্যান্য পোকায় কামড় দিলে যদি জ্বালাপোড়া হয়; তবে ক্ষতস্থানে কাঁচা পানিফল পিষে বা বেটে লাগালে দ্রুত ব্যথা দূর হয়। কাঁচা পানিফল বলকারক, দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার।
তিনি আরও জানানা, শালুক এবং পানি ফল আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। একে রক্ষা করতে হবে। কৃষকরা যখন এর ফল আহরণ করে তখন অপরিকল্পিতকভাবে গাছ বিনষ্ট করে। চাইলেই এই ফলগুলো বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা সম্ভব।
বাসস/সংবাদদাতা/১৬৫৭/মরপা