বাসস ক্রীড়া-১ : বাংলাদেশকে রেকর্ড ব্যবধানে হারালো আফগানিস্তান

175

বাসস ক্রীড়া-১
ক্রিকেট-এশিয়া কাপ
বাংলাদেশকে রেকর্ড ব্যবধানে হারালো আফগানিস্তান
আবু ধাবি, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৪তম আসরের ষষ্ঠ ও ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৩৬ রানের বড় ব্যবধানে হারালো আফগানিস্তান। ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানিস্তানের কাছে এত বড় ব্যবধানে আগে কখনো হারেনি বাংলাদেশ। ফলে রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারানোর রেকর্ড গড়লো আফগানরা। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫৫ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে ৪২ দশমিক ১ ওভারে ১১৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
আবু ধাবিতে গুরুত্বহীন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ওভারেই মারমুখী হয়ে উঠেন ওপেনার এহসানউল্লাহ। ঐ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পরপর দু’টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। তবে চতুর্থ বলেই এহসানউল্লাহকে থামিয়ে দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার। ৪ বলে ৮ রান করেন এহসানউল্লাহ।
এরপর শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ ও রহমত শাহ। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান প্রথম উইকেট শিকারী আবু হায়দার। ১৭ বলে ১০ রান করা রহমতকে বোল্ড করেন আবু হায়দার।
শেহজাদ ও রহমত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলেও, তৃতীয় উইকেট জুটি থেকে বলার মত স্কোরই পায় আফগানিস্তান। তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁেধন শেহজাদ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদি। বাংলাদেশ বোলারদের দেখেশুনে খেলে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন শেহজাদ ও শাহিদি। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন তারা।
তবে হাফ-সেঞ্চুরির পরই শেহজাদ-শাহিদির জুটিতে ভাঙ্গন ধরান সাকিব আল হাসান। শেহজাদকে শিকার করেন তিনি। ৪টি চারে ৪৭ বলে ৩৭ রান করেন শেহজাদ। জুটিতে শেহজাদ-শাহিদি ৮২ বলে ৫১ রান যোগ করেন।
শেহজাদকে শিকার করে থমকে যাননি সাকিব। পাঁচ নম্বরে নামা আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর আফগানকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। ১৬ বলে ৮ রান করেন আসগর।
আসগরের বিদায়ে উইকেটে আসেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। ভালো শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি শেনওয়ারি। কারন এখানেও বাধ সাধেন সাকিব। শেনওয়ারিকে বিদায় দেন তিনি। ৩১ বলে ১৮ রান করেন শেনওয়ারি।
একপ্রান্ত আগলে দলের রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শাহিদি। হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ধীর গতির ইনিংসটি বড় করতে পারেননি শাহিদি। বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনের প্রথম শিকার হবার আগে ৫৮ রানে থামেন তিনি। তার ৯২ বলের ইনিংসে ৩টি চার ছিলো।
রুবেলের শিকারের পর অন্যপ্রান্ত দিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন সাকিব। আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীকে বিদায় দেন তিনি। ২৪ বলে ১০ রান করেন নবী।
দলীয় ১৬০ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন নবী। তখন ইনিংসের ৫৫ বল বাকী ছিলো। অষ্টম উইকেটে বাকী ৫৫ বলে ৯৫ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন নাইব ও রশিদ।
নিজের ২০তম জন্মদিনের দিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রশিদ। ৩২ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন রশিদ। অন্যপ্রান্তে ৫টি চারে ৩৮ বলে অপরাজিত করেন ৪২ রান করেন নাইব। বাংলাদেশের সাকিব ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৫৬ রানের টার্গেটে দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ৭ রান করে আউট হন। প্রথম উইকেট হারানো পর ৪৩ রানের মধ্যে আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ইনিংসের শুরুতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এসময় ওপেনার লিটন দাস ৬, মোমিনুল হক ৯ ও মোহাম্মদ মিথুন ২ রানে ফিরেন।
শুরুর ধাক্কাটা পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁেধ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুুদুল্লাহ। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বোর্ডে জড়ো করছিলেন তারা। কিন্তু ৩২ রানে থাকা সাকিবকে তুলে নিয়ে আফগানিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দেন বার্থ-ডে বয় রশিদ খান। নিজের ৫৫ বলের ইনিংসে কোন বাউন্ডারি বা ওভার-বাউন্ডারি মারতে পারেননি সাকিব। চতুর্থ উইকেটে মাহমুুদুল্লাহ’র সাথে ৩৬ রান যোগ করেন সাকিব।
৭৯ রানে সাকিবের বিদায়ের কিছুক্ষণই পরই প্যাভিলিয়নে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ। রশিদের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৩টি চারে ৬০ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ৯০ রানে মাহমুদুল্লাহ’র বিদায়ে বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক হোসেনের ছোট ইনিংসে ১১৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষদিকে অপরাজিত ২৬ রান তুলে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমিয়েছেন মোসাদ্দেক। আফগানিস্তানের মুজিব-নাইব ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন আফগানিস্তানের রশিদ।
স্কোর কার্ড :
আফগানিস্তান ইনিংস :
শেহজাদ ক হায়দার ব সাকিব ৩৭
এহসানুল্লাহ ক মিথুন ব হায়দার ৮
রহমত বোল্ড ব হায়দার ১০
শাহিদি ক লিটন ব রুবেল ৫৮
আসগর বোল্ড ব সাকিব ৮
সামিউল্লাহ বোল্ড ব সাকিব ১৮
নবী এলবিডব্লু ব সাকিব ১০
নাইব অপরাজিত ৪২
রশিদ অপরাজিত ৫৭
অতিরিক্ত (বা-৪) ৪
মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৫৫
উইকেট পতন : ১/১০ (এহসানউল্লাহ), ২/২৮ (রহমত), ৩/৭৯ (শেহজাদ), ৪/১০১ (আসগর), ৫/১৩৯ (সামিউল্লাহ), ৬/১৫০ (শাহিদি), ৭/১৬০ (নবী)।
বাংলাদেশ বোলিং :
রুবেল : ৬-১-৩২-১,
হায়দার : ৯-১-৫০-২ (ও-১),
মিরাজ : ৮-০-২১-০,
মাশরাফি : ৮-০-৬৭-০ (নো-১),
সাকিব : ১০-১-৪২-৪,
মোসাদ্দেক : ৪-০-১৮-০,
মোমিনুল : ৩-০-১৫-০,
মাহমুদুল্লাহ : ২-০-৫-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস এলবিডব্লু ব আফতাব ৬
নাজমুল হোসেন শান্ত ক আফতাব ব মুজিব ৭
সাকিব আল হাসান এলবিডব্লু ব রশিদ খান ৩২
মোমিনুল হক ক শেহজাদ ব নাইব ৯
মোহাম্মদ মিথুন বোল্ড নাইব ২
মাহমুুদুল্লাহ বোল্ড ব রশিদ ২৭
মোসাদ্দেক হোসেন অপরাজিত ২৬
মেহেদি হাসান মিরাজ ক শাহিদি ব রহমত ৪
মাশরাফি ক আফতাব ব নবী ০
আবু হায়দার রান আউট (রশিদ) ১
রুবেল এলবিডব্লু ব মুজিব ০
অতিরিক্ত (ও-৫) ৫
মোট (অলআউট, ৪২.১ ওভার) ১১৯
উইকেট পতন : ১/১৫ (শান্ত), ২/১৭ (লিটন), ৩/৩৯ (মোমিনুল), ৪/৪৩ (মিথুন), ৫/৭৯ (সাকিব), ৬/৯০ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/১০০ (মিরাজ), ৮/১১০ (মাশরাফি), ৯/১১৯ (হায়দার), ১০/১১৯ (রুবেল)।
আফগানিস্তান বোলিং :
আফতাব : ৫-১-১১-১ (ও-১),
মুজিব উর রহমান : ৮.১-১-২২-২,
নাইব : ৬-০-৩০-২,
নবী : ১০-১-২৪-১ (ও-২),
শেনওয়ারি : ২-০-১২-০,
রশিদ : ৯-৩-১৩-২,
রহমত : ২-১-৭-১।
ফল : আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রশিদ খান (আফগানিস্তান)।
বাসস/এএমটি/১৪০০/স্বব