বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সাংবাদিকতা পেশাকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

168

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সাংবাদিক-অনুদান
সাংবাদিকতা পেশাকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে একটি টেলিভিশন এবং একটি রেডিও পেয়েছি। এরপর আমরা বেসরকারি খাতে টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দেই। সংবাদপত্র এবং রেডিও যে যেভাবে চেয়েছে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এর উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, বলেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি সাংবাদিকদের জীবন কেমন। তাদের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেতনেরও নিশ্চয়তা কম। এ কারণে, আমি নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করি।
সংবাদপত্র-টেলিভিশনে কখনো ভালো প্রচার পাননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হতে পারে সেখানে যারা মালিক হয়তো তাদের কারণে। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক সব সময় রয়েছে।’
সংবাদপত্রের সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে, ছাত্র জীবন থেকে জাতির পিতার সংবাদপত্রের সঙ্গে একটা সম্পর্ক ছিল। প্রথমে ইত্তেহাদ নামে একটা পত্রিকা, তার আগে ছিল মিল্লাত নামে একটা পত্রিকা। এরপর ইত্তেফাক বের হলো। তিনি কিন্তু সবসময় এসব পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নিজের হাতে ইত্তেফাক বিক্রি করার কাজও করেছেন এবং পূর্ববঙ্গের পক্ষ থেকে তিনি এসব পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করতেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর পিতার সম্পর্কে বলেন, তিনি যে সংবাদপত্রের লোক ছিলেন সেটা কিন্তু তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট লেখা আছে। সেদিক থেকে আপনারা আমাকে যদি আপনাদের পরিবারের একজন মনে করেন আমি খুশি হবো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকালে এক কাপ চা ও একটি পত্রিকা যে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষ রাখে না। টেলিভিশন বন্ধ রেখে সকালে পত্রিকা নিয়ে বসি। সব পত্রিকা যে পক্ষে লেখে, তা নয়। প্রয়োজনীয় সংবাদগুলো মার্ক করি। সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলি। সংবাদপত্র থেকে অনেক তথ্য পাই। দুর্গম জায়গার অনেক তথ্যও সংবাদপত্রে আসে। তাতে আমরা সহযোগিতা পাই। এ জন্য সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর এ দেশের মানুষের কথা বলার অধিকারটুকু পর্যন্ত হরণ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সব সামরিক শাসকেরই এই চরিত্রটা থাকে, তারা ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিবিদদের গালি দেন এবং এরপর তারাই উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ সেজে যান। যার কুফল ভোগ করেন দেশের আপামর জনসাধারণ। আর সুফল ভোগ করে তাদের সাথে যারা যোগ দিতে পারে সেই মুষ্টিমেয় একটা এলিট শ্রেণি। সেটাই ছিল বাংলাদেশের ভাগ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল কিন্তু তখনও মানুষের দ্বারে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ, তখনকার ক্ষমতাসীনরা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, স্বাধীনতার বিরোধিতা করাই ছিল তাদের কাজ। যার ফলে বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড যেগুলো দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে জাতির পিতা শুরু করেছিলেন সেসব বন্ধ হয়ে যায়।
সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের প্রতি জাতির পিতার আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আপনারা জানেন, স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানীরা পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সমস্ত সাংবাদিককে কিন্তু সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন জাতির জনক। তাদের অনেককে সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন। এই সুযোগ দেয়ার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছিল। যদিও সেই কমিটির সদস্যরা পঁচাত্তরের পর সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়েছিল।’
আবাসন সমস্যা নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সহযোগিতা চাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আবাসনের সমস্যার কথা উঠেছে। বিষয়টি আমি জানি। আমি যখন ন্যাম ফ্ল্যাট করেছি তখন বলেছিলাম কিছু ফ্ল্যাট থাকবে যেটা হায়ার পারচেজে সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক তারা নিতে পারবেন। যে কোন কারণেই সেটা আর হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কিছু ফ্ল্যাট করছি যেটা সামান্য টাকা দিয়ে, যেটা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করে এই ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন। যারা চান তারা হতে পারবেন। ভাড়া থেকেই মূল্যটা পরিষদ হবে। প্রতি মাসে ভাড়া হিসেবে যেটা হবে সেটা মূল্য হিসেবে ধরা হবে। সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট দিতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্লট দেওয়া হয়েছে, তখন সাংবাদিকদের অনেকে পেয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে ওভাবে প্লট না দিয়ে আমরা যদি ক্লাস্টার করে দিয়ে দিতাম। অনেকে মিলে হয়তো বাড়ি করতে পারতো।’
অনুষ্ঠানে মোট ১১৩ জনের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭০০/-আরজি