লিভারপুল জিতলেও আশা বাঁচিয়ে রাখলো রোমা

346

লিভারপুল, ২৫ এপ্রিল ২০১৮ (বাসস) : সাবেক ক্লাব রোমার বিপক্ষে অসাধারান পারফরমেন্সে লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জয় ঠিকই উপহার দিয়েছেন মিশরীয় তারকা মোহামেদ সালাহ। কিন্তু এ্যানফিল্ডে ৫-২ গোলে পরাজিত হয়ে এ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে ফিরতি লেগের আগে ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমাও নিজেদের আশা বঁাঁচিয়ে রাখলো। ম্যাচে সালাহ দুই গোল করা ছাড়াও আরো দুটি গোলে সতীর্থদের সহযোগিতা করেছেন।
এছাড়া ব্রাজিলিয়ান তারকা রবার্তো ফিরমিনোও দুই গোল করেছেন। অপর গোলটি করেছেন আরেক তারকা ফরোয়ার্ড সাদিও মানে। যদিও মানের বেশ কয়েকটি সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া হবার কারনে জয়ের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ উপহার দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল রোমা। আগামী ২ মে নিজেদের মাঠে খেলতে নামার আগে বার্সার বিপক্ষে স্মৃতি অবশ্যই বুকে নিয়েই মাঠে নামবে রোমা। বিশেষ করে গতকাল শেষ ১০ মিনিটে এডিন জেকো ও দিয়েগো পেরোত্তির গুরুত্বপূর্ণ দুটি এ্যাওয়ে গোল কিছুটা হলেও তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
ম্যাচ শেষে রোমা কোচ ইউসেবিও ডি ফ্র্যান্সেসকো বলেছেন, ‘এই গোলদুটি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এর কারনেই ফিরতি ম্যাচটিতে লড়াই করার আশা থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি ফুটবলে সবকিছুই সম্ভব। বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ম্যাচ। কিন্তু সবকিছুর পরেও জয়ের লক্ষ্যেই আমরা মাঠে নামবো।’
লিভারপুল তাদের সুযোগগুলো নষ্ট করার পাশাপাশি শেষের দিকে রক্ষনভাগের ব্যর্থতায় পিছিয়ে পড়লেও ১১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার পথে ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে। লিভারপুল ম্যানেজার জার্গেন ক্লপ বলেছেন, ‘অবশ্যই আমরা যদি ৫-০ কিংবা ৫-১ গোলে জিততাম তবে আরো বেশী খুশী হতাম। কিন্তু ৫-২ ব্যবধানও দারুন ফলাফল। আমরা সেখানে যাব ও নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আমরা যে গোলগুলো করেছি তার থেকে আরো বেশী গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম। এটাই এই ম্যাচের ইতিবাচক দিক।’
ম্যাচ শুরুর ১৮ মিনিটেই এ্যালেক্স-অক্সালেড চেম্বারলেইনের ইনজুরি ক্লপকে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছিল। ইনজুরির কারনে মাঠ ত্যাগ করা এই ইংলিশ মিডফিল্ডারের সামনে এখন বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরের মিনিটেই আলেক্সান্দার কোলারোভের দুর পাল্লার শট লোরিস করিয়াসকে পরাস্ত করলেও ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। কিন্তু পরমুহূর্তেই লিভারপুল নিজেদের ফিরিয়ে এনে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন ধীরে ধীরে নিজেদের করে নেয়। ফিরমিনোর পাসে মানে ম্যাচের প্রথম সুযোগটি নষ্ট করেন।
এই নিয়ে রোমা চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগের এ্যাওয়ে ম্যাচে পরাজিত হলো। এই সময়ে তারা ১৩টি গোল হজম করেছে। গত বছর ৪২ মিলিয়ন ইউরোতে লিভারপুলের কাছে ছেড়ে দেয়া সালাহই সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেন। ৩৫ মিনিটে গোল এরিয়ার মধ্য থেকে দারুন এক কার্লিং শটে গোলপোস্টের টপ কর্ণারে বল পাঠিয়ে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন সালাহ। ব্রাজিলিয়ান এক নম্বর গোলরক্ষক এ্যালিসন দারুন ফর্মে থাকলেও সালাহ’র এই গোলে তার কিছুই করার ছিল না। বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে অনেকটা এগিয়ে আসা এ্যালিসনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন সালাহ।
দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে চ্যাম্পিয়নস লীগের হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েও সতীর্থ মানের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। সেই পাস থেকে মানে কোন ভুল করেননি। আর এর মাধ্যমে সালাহ আরো একবার প্রমান করেছেন কেন তাকে বর্তমানে ফুটবলের অন্যতম স্বার্থপরহীন ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬১ মিনিটে তার ক্রসেই ফিরমিনো দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করেছেন। ৬৮ মিনিটে জেমস মিলনারের কর্ণারে ফিরমিনোর হেডে স্বাগতিকরা ৫-০ গোলে এগিয়ে যায়। এটি ছিল চলতি মৌসুমে লিভারপুলের ভয়ঙ্কর ত্রয়ী আক্রমনভাগের সব মিলিয়ে ৮৮তম গোল।
ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে সালাহকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেবার ক্লপের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। সালাহ’র অনুপস্থিতিতে ৮১ মিনিটে জেকো রোমাকে প্রথম গোল উপহার দেন। এটি ছিল মৌসুমে তার ২১তম গোল। এরপর ৮৫ মিনিটে মিলনারের হ্যান্ডবল থেকে প্রাপ্ত পেনাল্টিতে পেরোত্তি দ্বিতীয় গোল করেন।