বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : দারিদ্র্য বিমোচনে নারী

160

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
দারিদ্র্য বিমোচনে নারী
ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাড়াবিল গ্রামের বাসিন্দা আজাদ মিয়া। ভ্যান চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালায়। চার ছেলেমেয়েসহ মোট ছয়জনের সংসারে অভাব প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে। একদিন ভ্যান চালালে শরীরের ব্যাথায় ২/৩ দিন বসে-শুয়ে থাকতে হয় তাকে। এ নিয়ে স্ত্রী আলেয়ার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হয় আজাদ মিয়ার। ঝগড়া কোনো কোনোদিন মারামারি পর্যায়েও রূপ নেয়। সংসারে অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে আলেয়া ঝিয়ের কাজ নেয় অন্যের বাড়িতে।
এরই মধ্যে একদিন একজন এনজিও কর্মীর সঙ্গে আলেয়ার পরিচয় হয়। এনজিও কর্মীর কাছে তার সংসারের সব কথা খুলে বলে আলেয়া। তারপর এনজিও কর্মীর পরামর্শে আলেয়া সংসারে সচ্ছলতা আনার জন্য ঋণ নেয়। আলেয়া প্রথমে স্বল্পসুদে সাত হাজার টকা ঋণ নিয়ে তিনটি ছাগল কিনে তা পালন শুরু করে। এক বছরের মধ্যে ছাগল তিনটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চা বিক্রি করে আলেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করে আবারো ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গাভী কিনে। অল্প কিছুদিন পর গাভীটি বাচ্চা দেয় এবং সেই সঙ্গে উন্নতি হতে থাকে তাদের সংসারে। এরই মধ্যে আলেয়া তার স্বামীকে একটি ভ্যান রিক্সা কিনে দেয়।
আলেয়া এখন সব ঋণ শোধ করে তিনটি গাভী ও তেরটি ছাগলের মালিক। আলেয়ার স্বামী প্রতিদিন সকালে ভ্যানে করে গাভীর দুধ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় পৌঁছে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। স্বামীর উপার্জনের পাশাপাশি আলেয়ার উপার্জনের ফলে তাদের সংসারে আর অভাব নেই। আলেয়ার সন্তানেরা এখন স্কুলে যায়। আলেয়ার সংসার এখন সুখ-শান্তিতে ভরা।
দেশে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলা করা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার পাঁচটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং একটি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এসব পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন। এ যাবৎ বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বেশ হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে, যা সকল মহলে সমাদৃত হয়েছে।
আমাদের দেশের নারীদের এক বিশাল অংশ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত। বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন, মৎস চাষ, হাঁস-মুরগী পালন, সবজি বাগান, মৃৎশিল্প, বসতবাড়ির আশেপাশে বৃক্ষরোপন এবং বাঁশ ও বেতভিত্তিক শিল্পপণ্য ইত্যাদি কর্মের সাথে নারীরা সরাসরি জড়িত। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের প্রায় ৩৪ শতাংশই নারী। শহর কেন্দ্রিক শ্রম নির্ভর শিল্পে বিশেষত পোশাক শিল্পের আশি শতাংশ কাজ তারাই করে থাকে। কাপড় সেলাই, নকশা, বাটিক, বুটিক ও এমব্রয়ডারী ইত্যাদি উপার্জনমূলক কর্মের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী জড়িত। এছাড়াও নারীরা যুক্ত আছে বিপনীকেন্দ্র, অভ্যর্থনা ডেক্সে, বিজ্ঞাপনী সংস্থায়, শিক্ষকতা, শিল্পকলা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী মহলের বিভিন্ন স্তরে। কাজেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ এখন অনেকটাই প্রশস্ত।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা আজ সুস্পষ্ট যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার ভূমিকা অনেক। একজন শিক্ষিত নারী শ্রমিক আর একজন অশিক্ষিত নারী শ্রমিকের মধ্যে পারিশ্রমিকের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং বেশি অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষা সামাজিক কল্যাণ বয়ে আনে। একজন নারীকে লেখাপড়া শেখানোর অর্থই হচ্ছে তার পুরো পরিবারকে শিক্ষিত করা। একজন নারীকে শিক্ষিত করার অর্থ হচ্ছে পরিবার ও সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীভূত করা। একজন নারীকে শিক্ষিত করার অর্থ তাকে স্বাবলম্বী করে তোলা। তাই দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর সম্মিলিত অংশগ্রহণ দরকার।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/মুখা/-আসচৌ/১১৫৫/আহো/ওজি