আওয়ামী লীগকে জনগণ আবারো ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে : আশাবাদ প্রধানমন্ত্রীর

1020

ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্যই জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের মাঝে এখনও আওয়ামী লীগের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে, কারণ জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশ এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপেও এটা উঠে এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন।
সততাকেই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল যারা অপেক্ষা করেই থাকে কখন দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করবে আর তাদের অবস্থার উন্নতি হবে।’
‘কিন্তু, সেই আশা করে আর লাভ নেই। উত্তরপাড়া আর আসবে না তাদের ক্ষমতায় বসাতে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন জোট গঠনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তারা যেখানে চাইবে সেখানেই সরকার তাদের সভা করতে দেবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন দুটি ঐক্য ফোরাম গঠনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম হওয়া উচিত। আরো নতুন নতুন পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন তৈরি হোক।
তিনি বলেন, তাঁরা আগামীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করতে চেয়েছেন, তাঁরা যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চান, আমরা করতে দেব। আমাদের কোন আপত্তি নাই, আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করবো আপনারা বাধা দেবেন না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দরকার হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি স্থায়ী মঞ্চ করে দেব। যার যত খুশি সেখানে বক্তৃতা দিতে পারবে। আমি বলবো একটি কর্ণার ঠিক করে দিতে সেখানে বক্তৃতা দিক, আন্দোলন করুক, যা খুশী করুক। কারণ আমরা কারো গলা চেপে ধরিনি, আমরা কারো মুখ বন্ধ করিনি।
‘কিন্তুু যারা মিথ্যাচার করবে, উস্কানিমূলক কাজ করবে এবং সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর পর দু’বার ক্ষমতায় থেকেও জনপ্রিয়তা ধরে রাখা, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা-এটা কিন্তু সচরাচর হয় না। আমরা সেটা করতে পেরেছি, এটা হলো বাস্তবতা।
সত্যিকারভাবেই তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে বলেই এই জনপ্রিয়তাটা ধরে রাখতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়াটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে বলেই আমরা জনগণের এই আস্থা ও বিশ্বাসটা ধরে রাখতে পেরেিেছ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনেও বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবে, উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র সীমাহীন সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর লুটপাট, দুর্নীতি এবং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫শ’ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং আহসানউল্লাহ মাষ্টার এমপি হত্যাসহ ২০০১-এর নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন এবং বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
তিনি বিএনপি’র দুর্নীতি এবং অপপ্রচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তারেক জিয়া চুরি চামারির টাকা দিয়ে লন্ডনে তিনখানা গাড়ি, ড্রাইভার, চাকর-বাকর রাখে, অন্যদিকে তিনি সেদিন শেখ রেহানার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় জানতে পারেন, রেহানা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করছেন, তিনি (শেখ রেহানা) তখন বাসে করে এক জায়গায় যাচ্ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কাজ করেন জনগণের জন্য জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার জন্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, চুরি করেছে, বিদেশে পাচার করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে যতরকম অপকর্ম, মানুষ খুন, মানুষ পোড়ানো দেশের সম্পদ নষ্ট করা-জনগণকে আমি বলবো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সবসময় সজাগ থাকতে হবে। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা মনে করি জনসমর্থন কিন্তু আমাদের ব্যাপক। মানুষের মাঝেও আস্থা ও বিশ্বাস আছে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা শান্তিতে থাকবে, তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তারা ভালভাবে বাঁচবে। এটা কিন্তু গ্রামের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত একদম সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশের জনগণের আওয়ামী লীগের এগিয়ে থাকার প্রসঙ্গও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।
‘আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ৯ বছরে দেশে সাড়ে ছয় হাজারের ওপর নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে এতগুলো নির্বাচন হলো কে কতটুকু অভিযোগ আনতে পেরেছে বা দোষ ধরতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘তিনটা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা একটায় সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারলাম। কই আমরাতো সেই সিট দখল করতে যাইনি। তাহলে আমাদের অপরাধটা কোথায়? আর নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু, আর নিরপেক্ষ হয় না কিভাবে তারা প্রমাণ করবে?’
তিনি এসময় ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে গ্রেফতারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, যখন ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে (নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন) সেই সময় আমাদের আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করলো, আমাদের ৪৬ জন নেতা-কর্মী আহত হলো, তখন একটি রিউমার ছড়ানো হলে সেখানে ৪টি লাশ পড়ে আছে এবং মহিলাদের সেখানে ধর্ষণ চলছে, এরপর তিন তিনবার আওয়ামী লীগ অফিসে ছাত্ররা গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে কিছু পেল না।
তিনি বলেন, একজন আঁতেল আল জাজিরা টেলিভিশনে এই সম্বন্ধে ইন্টারভিউ দিয়ে দিল, পরে সেই আল জাজিরা টিভিকে ক্ষমা চাইতে হলো মিথ্যা নিউজ দেওয়ার জন্য এবং তারই মিথ্যা অপপ্রচারের জন্য আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ হলো।
সরকার প্রধান প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এই যে মিথ্যা কথা বলে উস্কানি দিয়ে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো তার বিরুদ্ধে কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?
তিনি বলেন, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়াটা তাঁর সরকারের কর্তব্য এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে করণীয় কাজটা সরকারকে করতে হবে।