এশিয়া কাপ : মুশফিকের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬১ রান

220

দুবাই, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৪তম আসরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে ২৬১ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘বি’ গ্রুপে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু শুরুটা মোটেই ভাল করতে পারেননি দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন শ্রীলংকান পেসার অভিজ্ঞ পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।
প্রথম চার বল থেকে ১ রান দেন মালিঙ্গা। ওভারের পঞ্চম ও শেষ বলে বাংলাদেশ ওপেনার লিটন ও তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসানকে শুন্য হাতে ফিরে দেন দীর্ঘ দিন লংকান দলে ফেরা মালিঙ্গা। তার আউট-সুইং না বুঝে স্লিপে ক্যাচ দেন মিথুন। আর মালিঙ্গার ইন-সুইংয়ের কাছে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন সাকিব।
ইনিংসের পরের ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও। তবে আউট হয়ে নয়, শ্রীলংকার আরেক পেসার সুরাঙ্গা লাকমলের শেষ ডেলিভারিতে বাঁ-হাতের কব্জিতে আঘাত পান তামিম। এরপরই মাঠ ছাড়েন তিনি। তখন তার রান ছিলো ২।
৩ রানের মধ্যে লিটন-সাকিবের সাথে তামিমকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে সামনে এগিয়ে যাবার সাহস দেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। বেশ সর্তকতার সাথে খেলতে থাকেন তারা। ফলে প্রথম পাওয়া-প্লে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২৪ রান।
উইকেটে সেট হয়ে পরের দশ ওভারের রানের গতি বাড়িয়েছেন মুশফিক ও মিথুন। ১১ থেকে ২০ ওভারে ৭৮ রান যোগ করেন মুশফিক-মিথুন জুটি। এরমধ্যে নিজের চার ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মিথুন। অন্যপ্রান্তে হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন মুশফিকুর। কিছুক্ষণবাদে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনিও।
অর্ধশতকের পরও দলের রানের চাকা ভালোই ঘুরাচ্ছিলেন মিথুন-মুশফিক জুটি। এতে ২৫ ওভার শেষে সাড়ে পাঁেচর কাচছাকাছি গড় রেখে স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ১৩৪ রান সংগ্রহ করেন তারা।
তবে ২৬তম ওভারে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান ইনিংসের শুরুতে বাংলাদেশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানা শ্রীলংকার মালিঙ্গা। ওভারের তৃতীয় বলে মালিঙ্গাকে অহেতুক ওভার বাউন্ডারি মারতে গিয়ে অকাশে বল তুলে দেন মিথুন। সেটি তালুবন্দি করতে ভুল করেননি শ্রীলংকার কুশল পেরেরা। শেষ পর্যন্ত ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৮ বলে ৬৩ রান করে থেমে যান মিথুন। যা তার চার ম্যাচ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
দলীয় ১৩৪ রানে মিথুন ফিরে যাবার পর বাংলাদেশ ইনিংসে মিনি ধস নামে। ৬ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন। দু’জনই ১ রান করে করেন।
১৪২ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোয় একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে টিকে ছিলেন একমাত্র মুশফিক। লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজ ও অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে দলের স্কোর দু’শর কাছাকাছি নিয়ে যান মুশফিকুর। দলীয় ১৯৫ রানের মধ্যে আউট হন মিরাজ ও মাশরাফি। মিরাজ ১৫ ও ম্যাশ ১১ রান করেন।
দশ নম্বরে নামা রুবেল ২ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ২৬ রান যোগ করেন মুশি। এরমাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিও তুলে নেন মুশফিকুর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি।
দলীয় ২২৯ রান ও ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ আউট হলে, হাতের ব্যাথা নিয়ে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন তামিম। শুধুমাত্র উইকেটে টিকে থেকে মুশফিককে সঙ্গ দেন তামিম। এই সুযোগে আরও ৩২ রান এনে দেন মুশফিক। ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশি আউট হলে তিন বল বাকি থাকতে ২৬১ রানে বাংলাদেশ ইনিংস।
১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৫০ বলে ১৪৪ রান করে আউট হন মুশফিক। এটিই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে ২ রান নিয়ে দ্বিতীয়বারের ব্যাট হাতে ঐ স্কোরেই অপরাজিত থাকেন তামিম। শ্রীলংকার পক্ষে মালিঙ্গা ১০ ওভারে ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল অপরাজিত ২
লিটন দাস ক মেন্ডিস ব মালিঙ্গা ০
সাকিব আল হাসান বোল্ড ব মালিঙ্গা ০
মুশফিকুর রহিম ক মেন্ডিস ব পেরেরা ১৪৪
মোহাম্মদ মিথুন ক পেরেরা ব মালিঙ্গ ৬৩
মাহমুদুল্লাহ ক ডি সিলভা ব আপোনসো ১
মোসাদ্দেক হোসেন ক পেরেরা ব মালিঙ্গা ১
মেহেদি হাসান মিরাজ ক এন্ড ব লাকমাল ১৫
মাশরাফি বিন মর্তুজা ক থারাঙ্গা ব ডি সিলভা ১১
রুবেল হোসেন এলবিডব্লু ব ডি সিলভা ২
মুস্তাফিজুর রান আউট (মেন্ডিস/পেরেরা) ১০
অতিরিক্ত (লে বা-৪, নো -১, ও-৭) ১২
মোট (অলআউট, ৪৯.৩ ওভার) ২৬১
উইকেট পতন : ১/১ (লিটন), ২/১ (সাকিব), ২/৩ (তামিম, আহত), ৩/১৩৪ (মিথুন), ৪/১৩৬ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/১৪২ (মোসাদ্দেক), ৬/১৭৫ (মিরাজ), ৭/১৯৫ (মাশরাফি), ৮/২০৩ (রুবেল), ৯/২২৯ (মুস্তাফিজুর), ১০/২৬১ (মুশফিকুর)।
শ্রীলংকা বোলিং :
মালিঙ্গা : ১০-২-২৩-৪ (ও-৩, নো-১),
লাকমল : ১০-০-৪৬-১ (ও-১),
আপোনসো : ৯-০-৫৫-১,
থিসারা পেরেরা : ৭.৩-০-৫১-১ (ও-১),
দিলরুয়ান পেরেরা : ৩-০-২৫-০,
ডি সিলভা : ৭-০-৩৮-২ (ও-১),
শানাকা : ৩-০-১৯-০।
বাসস/এএমটি/২১৫৫/স্বব