চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে শিমচাষ : ফলন ও বাজার দরে খুশি শিম চাষিরা

537

চুয়াডাঙ্গা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : অনুকুল পরিবেশে থাকায় চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠে আগাম অটোজাতের শিমের আবাদ করেছে চাষিরা। ভাল ফলন এবং ভাল বাজার পেয়ে খুশি শিম চাষিরা। এরই মধ্যে বেচা বিক্রি করে অনেক চাষি আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছে। ফলে বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। স্বল্প সময়ে টাকার মুখ দেখতে পাওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী অর্থকরি ফসলের চাষাবাদের চেয়ে সবজি আবাদের দিকে ঝুকছে চাষিকুল।
চুয়াডাঙ্গায় মোট জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ হাজার হেক্টর। জেলাতে ভুট্টা আবাদের পর পরই সবজি আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আবহাওয়া তুলনামূলোক অনুকুল এবং উঁচু সমতল জমি হওয়ায় জমিগুলো সবজি চাষের উপযোগী। তাই প্রতিবছর কোন না কোন প্রকার আগাম সবজির চাষ করে থাকে জেলার কৃষকেরা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭শ ৬৭ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম চাষ করেছে চাষিরা। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩৫২ হেক্টর, জীননগর উপজেলায় ১২৫ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ২১৫ হেক্টর জমি। চলতি বছর বৃষ্টিপাত থেমে থেমে হওয়ায় অসময়ে শিমের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে।
গ্রামের মাঠে দিকে তাকালে দেখা যায় আবাদযোগ্য জমিজুড়ে শিম আর শিমের মাচা। মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল অটো জাতের শিম। শিম চাষ এলাকাটিকে সাজিয়েছে সবুজের আবরণে। বিকাল হলেই চাষিরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। কারণ বিকালের দিকে শিমের পরিচর্যারর উপযুক্ত সময়।
দোস্ত গ্রামের শিমচাষি আবু হানিফ জানান, কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করে আসছি। বর্তমানে আড়াই বিঘা জমি শিমচাষ করেছি। এ আবহাওয়ায় শিমের ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি বাজার দরও বেশ ভালো। আমার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা শিম চাষ চাষ করেছে। প্রথমে অল্প অল্প জমিতে শিম চাষ করতে করতে চাষিরা এখন ব্যাপক হারে শিম আবাদ করেছে। প্রতিবছর শিম বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে চাষিরা। এভাবে ধীরে ধীরে শিম বরবটি, বেগুন, ধনিয়াপাতা, ফুল কপি, আর কাকরোল সহ নানা জাতের শাক সবজির আবাদ এলাকার চাষিরা বেছে নিয়েছে জীনব জীবিকার অবলম্বন হিসাবে।
তিরি আরো জানান, গত বছরের ন্যায় এবছর সাড়ে আড়াই বিঘা জমিতে অটো জাতের শিম চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা পতি একলক্ষ টাকা করে শিম বিক্রি করতে পারবো। এরই মধ্যে কয়েক মণ শিম বিক্রি করে ফেলেছি। শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পার বলে আশা রাখছি।
এ সময়ে শিমচাষ করেছে তারা প্রত্যেকেই লাভবান হবে। শিমচাষি মনু মিয়া, এনাফ বিশ্বাস, আবু হানিফ, বোরহান, আমিরুল, মালেক মেম্বর, ফারুক, চান্দু, কাশেম, মালেক বিশ্বাস, মনির হোসেন, শুকুর আলীসহ বেশ কিছু কৃষক শিম চাষ করে বদলে ফেলেছে নিজেদের ভাগ্য।
এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোন স্থানে যেতে হয় না। রাজধানী শহর ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও কোন কোন কৃষক শিম নিজে তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করে থাকে। এবছর শিমের বাজার বেশ ভাল। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ১শ থেকে ১১০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দাম থাকলে শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, এলাকার জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ভুট্টার পরপরই চাষিরা শিমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকে। সবজি চাষের ব্যাপারে চাষিরা বেশ অভিজ্ঞ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে এলাকার চাষীদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় আনতে পারলে শিমসহ সবজি চাষ গ্রমীণ অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতার দ্বার খোলা রয়েছে। আর অটো জাতের শিম এটা মানুষের দেয়া নাম।