নারী ও শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

993

ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫(বাসস): কামাল-রুমা দম্পতির একমাত্র সন্তান রোদেলা গত চার দিন ধরে খুব জ্বরে ভুগছে। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। জ্বরের সাথে সাথে তার বমি আর পেটে প্রচন্ড ব্যাথা। কামাল এলাকার ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষুধ কিনে মেয়েকে খাওয়ালেও জ্বর কমার কোন লক্ষন নেই।
পাঁচ দিনের দিন তারা রোদেলাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। জ্বও, বমি আর পেট ব্যাথার কথা শুনেই ডাক্তার বুঝে গেলেন রোদেলার কি হয়েছে। তারপরও নিশ্চিত হওয়ার রক্তসহ কিছু পরীক্ষা করাতে বললেন কামালকে। পাশাপাশি দেরী না করে রোদেলাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বললেন ডা. নাজমুল ইসলাম।
পরদিন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসার পরই বোঝা গেল ডাক্তার যা আশঙ্কা করেছিলেন তাই হয়েছে। রোদেলা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এবং তার চিকিৎসার শুরুটা অনেক দেরী হয়ে গেছে। হাসপাতালে দু’দিন জ্বরের সাথে লড়াই শেষে মারা গেল রোদেলা। মূলত রোদেলা মারা গেছে ডেঙ্গু শকড সিনড্রোমে।
গত কয়েক বছর ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা দেখা না গেলেও এ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে নগরীতে তা বেড়ে গেছে। আশাঙ্কাজনক হারে না বাড়লেও এর মধ্যেই এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে মৃতের সংখ্যা সাত-এ দাঁড়িয়েছে। এবং দুখজনক হলেও সত্যি- এসব মৃতের সবাই নারী এবং শিশু। তাদের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী এবং অন্য তিনজন শিশু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চারজন নারী ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অন্যদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে দুই জন এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালে একজন শিশু মারা যায় এই ডেঙ্গু রোগে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১ জানুয়ারী থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু। শুধুমাত্র গত জুন মাসেই ২৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা ইনস্টিটিইটের সূত্র মতে গত বছর এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২,৭৬৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল আটজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার ডাক্তার সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, মূলত জুন থেকে অক্টোবর মাসের দিকে এই ডেঙ্গু রোগ বাহিত মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এসময় রাস্তা, নালা, নর্দমা এমনকি ফুলের টব, ডাবের খোসা অথবা বাসা-বাড়ীর ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা নোংরা পানি থেকে জন্ম নেয় এডিস মশা। এই এডিশ মশা থেকেই ডেঙ্গু জ্বর হয়।
তিনি বলেন, এ সময় জ্বর আসেলে অনেকেই নিজেরা নিজেদের চিকিৎসা শুরু করে দিই, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সবার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং তার পরামর্শ মত ব্যবস্থা নেয়া।
সোহাগ বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ রয়েছে যেমন- জ্বরের সাথে রোগীর বমি এবং তলপেটে ব্যাথা হয়। একজন রোগীর এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই অবশ্যই সাথে সাথে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যে সাতজন নারী এবং শিশু মারা গেছে তারা শকড সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক শকডে মারা গেছেন। মূলত নারী এবং শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের চাইতে কম হওয়ায় তারা মারা যাচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা ইনস্টিটিইটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা বলেন, আমাদের সবারই বাসা-বাড়ী পরিষ্কার রাখা উচিত। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় পানি জমে থাকে এমন পাত্র ধ্বংস করতে হবে যাতে করে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত নগরীতে প্রায় ৯০০ জন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইট আপডেট করেছি যেখানে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং শিক্ষামলূক বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। সাধারন মানুষ এই ওয়েবসাইট থেকে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এডিস মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার এবং সাধারন মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলার জন্য সাবরিনা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশঙ্কাজনক হারে বাড়েনি। তাই ভীত-সন্ত্রস্ত না হওয়ার জন্য তিনি সাধারন মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।