বাসস দেশ-১৭ : ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা

315

বাসস দেশ-১৭
বাকৃবি-ইলিশ
ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা
ময়মনসিংহ, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য বিজ্ঞানীরা বিশ্বে এই প্রথম ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন।
এখন থেকে কোন নদীতে কি পরিমান ইলিশ মাছ স্টক আছে, তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন এই গবেষকরা।
শনিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাকৃবি’র ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ও তার সহযোগী গবেষকরা এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম ও ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সর মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টক কিনা তা জানা যাবে । বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন করে থাকে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জীনগতভাবে পৃথক কিনা তা জানা যাবে। এমনকি কোনো নির্দিষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কিনা সেসব তথ্যও জানা যাবে।
তিনি জানান, জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াসহ সকল জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোম দ্বারা। ইলিশের জিনোমে ৭৬ কোটি ৮৪ লাখ নিউক্লিওটাইড রয়েছে যা মানুষের জিনোমের প্রায় এক চতুর্থাংশ। ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে খুব সহজেই।
তিনি আরো বলেন, এরকম নতুন নতুন তথ্য উন্মোচনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে ইলিশের টেকসই আহরণ। ইলিশের জন্য দেশের কোথায় কোথায় ও কতটি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা সহজ হবে। দেশীয় ইলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের (ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য) ইলিশ থেকে জীনতাত্ত্বিকভাবে স্বতন্ত্র কিনা তাও নিশ্চত হওয়া যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সংবেদনশীল ও খাপ খাওয়ার জন্য নিয়ামক জিন আবিস্কারের মাধ্যমে ইলিশের বায়োলজির উপর বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরুপণ করাও সহজ হবে।
গবেষকরা জানান, তারা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলী প্রস্তুত করেন। ওই বছরের ২৫ আগস্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে’ (এনসিবিআই) জমা দেন। এছাড়াও ইলিশের জিনোম বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল দু’টি আর্ন্তজাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এককভাবে সর্বাধিক অবদান রাখছে জাতীয় মাছ ইলিশ। একক প্রজাতি হিসাবে বাংলাদেশে ইলিশের অবদান সর্Ÿোচ্চ- মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশে পৃথিবীর মোট ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয় । এদেশের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষভাবে ইলিশ আহরণের সাথে জড়িত। কাজেই এই জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাসস/সংবাদদাতা/এফএইচ/১৯১৫/-শহক