বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : জনগণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

959

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বই-বঙ্গবন্ধু
জনগণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, বাঙ্গালি সব সময় বৈষম্যের শিকার ছিল আর এই বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং আজন্ম লড়াই-সংগ্রাম করেছেন জাতির পিতা। এ কারণে মনে হয় তাঁর প্রতি পকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর একটি বৈরী মনোভাব ছিল এবং এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা সবসময় সক্রিয় ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন, কি বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সবসময় পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ রিপোর্ট তৈরি করতো এবং রিপোর্ট পাঠাতো। আর এই রিপোর্ট যে পাঠাতো তারই ওপর ভিত্তি করে তাঁর বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা দেয়া হত এবং তাঁকে বারবার গ্রেফতার করে জেলে পাঠনো হত। আমরা সন্তান হিসেবে খুব কম সময়ই তাঁকে কাছে পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বঞ্চনার থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। ধাপেধাপে একটি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁরই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,১৯৭৫ এর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি শুরু হয়, সে সময় জাতির পিতার নাম নেয়াও নিষিদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে অবধারিতভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম আসবেই। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান প্রচারে জাতির পিতার অংশটুকু কায়দা করে সেন্সর করে বাদ দেওয়া হত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি এসবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দিনকে সে সময়কার (পাকিস্তান আমলের) গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোর বিষয়ে জানালে শামসুদ্দিন সে সমস্ত ফাইলের হদিস তাঁকে জানান। তিনি সমস্ত ফাইল নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসেন ।
বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, তিনি সে সময় ফাইলের তিনটি ফটোকপির সেট করে এক সেট নিজের কাছে রাখেন এবং তিনি ও প্রয়াত বেবী মওদুদ সেসব ফাইল নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং একটি সেট আমেরিকায় বঙ্গবন্ধুর গবেষক ড. এনায়েতুর রহিমের কাছে পাঠান।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালে সরকারের আসার পর এসবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বর্তমান আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারিকে তিনি এসব ফাইলের কথা এবং এ সংক্রান্ত প্রকাশনার আগ্রহ ব্যক্ত করলে ড. জাভেদ এবং তাদের একটি ২২ জনের একটি দল এই ডকুমেন্ট নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেন। যদিও এসব পুরনো কাগজ ঘেঁটে বই আকারে তথ্য প্রস্তÍুত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৪৬টি ফাইল এবং ৪০ হাজারের মত পাতা। সেগুলোকে নিয়ে বসে এডিট করে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে নিয়ে সেগুলোকে ‘ডি কালসিফাইড’ করে আজকে এই প্রকাশনাটি করতে পেরেছি। এটার যে নামটা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টোলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সেটাই আমরা দিয়ে আজকে এটি প্রকাশ করলাম।
তিনি বলেন, এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে অমূল্য তথ্যভান্ডার পাওয়া গেছে। প্রথমে হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট যেগুলো সবই জাতির পিতার বিরুদ্ধে, এই রিপোর্টের মধ্যদিয়েই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকান্ড, গতিবিধি, কোন মিটিং করেছেন এবং সেখানে কি বক্তৃতা দিয়েছেন- তার অনেক তথ্য সেখানে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চিঠি-পত্র পাওয়া গেছে যেগুলো বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন। যা প্রাপকের কাছে কোন দিন পৌঁছেনি এবং তাঁকেও অনেক চিঠি-পত্র লেখা হয় সেগুলোও সেখানে পাওয়া গেছে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীর নাম সেখানে পাওয়া গেছে। ’৬৬ র ছয় দফা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলারও সকল তথ্যবলী এবং গণঅভ্যুথানের ফলে আইয়ুব খান যখন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো সেই মুক্তি প্রদানের নির্দেশনাও সেখানে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭১ পর্যন্ত এসব তথ্যই আমরা প্রকাশ করছি এবং এডিটিংয়ের ক্ষেত্রেও মূলবিষয় ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।
বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি তাঁকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে, সঙ্গে থেকে, এডিটিংয়ে সহায়তা করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশের আইজিপি ড.জাভেদ পাটোয়ারী এবং এসবি’র ২২ জনের দল এবং প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বইটির প্রকাশনা সংস্থা হাক্কানী পাবলিশার্সকে বাকি ১৩টি খন্ডের দ্রুত প্রকাশনা সম্পন্ন করে ফেলার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, প্রথম খন্ডটি করা দুরুহ ছিল সেটা আমরা করে ফেলেছি, প্রথম খন্ডে ১৯৪৮ খেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে ধারণ করা হয়েছে, বাকি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টিসহ মোট ১৪টি খন্ডে এটি প্রকাশিত হবে।
১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তাঁর এই বইয়ে প্রদত্ত একটি উদ্বৃতি শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন- ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষার আন্দোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এই আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থাৎ ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আদলে তিনি বাংলাদেশের জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকেরকে প্রতিষ্ঠার জন্যই ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং আমাদের স্বাধীনতা এনে দেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, কয়লার খনি খুঁড়ে খুঁড়ে যেমন হিরার সন্ধান লাভ করা যায় তেমনি জাতির জনকের বিরুদ্ধে করা এই ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টের মাধ্যমেই তেমনি হিরক খন্ড বা সত্য উদ্ভাসিত হবে, কারণ এগুলো বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর কর্মকান্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে, নিজস্ব কোন বিষয় নয়।
কারো বিরুদ্ধে করা রিপোর্ট নিয়ে এ ধরনের প্রকাশনাও বিশ্বে নজীরবিহীন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১০০৫/-আসচৌ