আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ঝোঁক গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক : তথ্যমন্ত্রী

441

ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘বেগম জিয়ার আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের ঝোঁক বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখারই চক্রান্ত এবং এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক।’
তিনি বলেন, ‘আদালতে যাবেন না বলে আদালতের ওপরে রাজনৈতিক তকমা আরোপ করে বেগম জিয়া একদিকে নিজের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করছেন, অপরদিকে আদালতকেও রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। বিএনপিনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদালতের না যাবার কথা বলে আদালতের প্রতি যে কটূক্তি করেছেন, তা বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিরই অংশ এবং গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’
তথ্যমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী সংস্থার সাথে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
রাজনীতির ক্ষেত্রে শিল্পীদের অবদান কোন অংশেই কম নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী এসময় শিল্পীদের সম্মানী, শ্রেণিবিন্যাস ও বিভিন্ন দাপ্তরিক সুবিধাদি পুণরায় পর্যালোচনা করে যুগপোযোগী করে তোলার পক্ষে অভিমত দেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, আদালত যেকোনো জায়গায় বসতে পারে। আদালত কারাগারে অথবা যেকোনো জায়গাতেই বসুক, দেখতে হবে তা উন্মুক্ত কি না। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে, দর্শকদের বসার সুযোগ আছে, সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার আছে। এটি কোনো গোপন আদালত নয়। সুতরাং উন্মুক্ত আদালতে না যাবার কথা বলার অর্থ বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চক্রান্ত।’
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি পঁচাত্তরের পর থেকে দীর্ঘদিন বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিই চর্চা করেছে। খুনী-অপরাধীদের বিচারের উর্ধ্বে রাখার অপচেষ্টা করেছে। আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেগম জিয়া বিচারহীনতার মধ্যে বসবাস করাই ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য এটি বিপদজনক একটি ঝোঁক। তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা, আগুনসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানো, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলাগুলোকে রাজনৈতিক মামলা বলে চালানোর অপচেষ্টা করে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’
‘এ রাজনীতি আসলে অপরাজনীতি এবং বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংবিধান অক্ষুন্ন রাখতে হলে বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘দল দেখে, মুখ দেখে, নেতা-নেত্রীর চেহারা দেখে আইন চলবেনা। আইন মানতে হবে, আদালত মানতে হবে। যারা তা মানে না, তারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকেই অস্বীকার করে, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, বাংলাদেশে একটা অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করতে চায়। আর শিল্পীরাই হবেন এক্ষেত্রে অগ্রপথিক।’
অতীতের সামরিক ও সাম্প্রদায়িক সরকারগুলোর কারণে দেশের রাজনীতি ও সমাজে একটা ঘাটতি তৈরি হয় উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার দশ বছর থেকে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য চেষ্টা করছে। এবং সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকার থেকে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও আইনের পথে দেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণ হলেও সংস্কৃতি ও নৈতিকতার ঘাটতি এখনো পুরোপুরি পূরণ হয়নি। সেকারণেই গণতন্ত্র এখনো পুরোপুরি বিপদমুক্ত নয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে শেখ হাসিনার সরকার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে দেশকে আইন ও বিচারের পথে আনছেন, রাজনীতি থেকেও অপরাধীদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঠিক এই সময় একটি মহল বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির ভিতরে বসবাস করতে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
শিল্পী সংস্থার সভাপতি ড. ইনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আজম বাশারসহ বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীবৃন্দ সভায় আলোচনায় অংশ নেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবুয়াল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজহারুল হক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আমির হোসেন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীলসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।