বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : দোলনচাঁপায় স্বস্তি নারীদের

326

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
দোলনচাঁপায় স্বস্তি নারীদের
ঢাকা, ৫সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) -: রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে কেনাকাটা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ফটকের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষায় সাদিয়া আক্তার। তিনি কাজ করেন বনানীর একটি আইটি ফার্মে। যাবেন মিরপুর ১০ নম্বরে। একে একে ওই রুটের একাধিক বাসা তার সামনে দিয়ে গেলেও সেগুলো থামানোর কোন সংকেতই দিলেন না তিনি। দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করলেন প্রায় আধ ঘন্টা। অন্যকোন বাস নয়, তিনি অপেক্ষা করছেন দোলনচাঁপা নামে মহিলা বাসের জন্য। যেটি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য। চালক ছাড়া এর আরোহী সবাই নারী।
সাদিয়া জানালেন, দোলনচাঁপায় নারীদের চলাচল আরও নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হয়েছে। সাধারণ পরিবহনে পুরুষ যাত্রীদের ঠেলাঠেলিতে এবং ভীড়ের মধ্যে নারীদের অপেক্ষা করতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। এখন আর সেই দিন নেই। অনেক ভাল সময় এসেছে মহিলা বাস সার্ভিসের কারণে।
শুধু সাদিয়া নয়, কথা হয় ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্রী উর্মির সঙ্গে। তিনি জানান, ‘কেনাকাটা শেষে আম্মু আর আমি বেশ কিছুক্ষণ সিএনজি ভাড়ার চেষ্টা করি। না পেয়ে পরে বাসে ওঠার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ভীড় ঠেলে উঠতে সাহস হয়নি। হঠাৎ দেখি, একটি বাসে লেখা দোলনচাঁপা মহিলা বাস সার্ভিস। কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়ে বাসে উঠে পড়ি।’
এভাবেই নারীদের জন্য চালু হওয়া বেসরকারি বাসে চড়ার অভিজ্ঞতার কথা শোনান শাকিলা ও মৌসুমী নামে ঢাকা সিটি কলেজের আরও দুই ছাত্রী। তারা মিরপুর ১০ নম্বর থেকে এ বাসটিতে ওঠেন। শাকিলা বলেন, ‘বেশ গরম। হাতে কয়েকটা ব্যাগ। কোনো গাড়িও পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ দোলনচাঁপা দেখে উঠে যাই।
রাজধানীর নারীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে গত ২ জুন মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দোলনচাঁপা নামে একটি বাস চালু হয়। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে বাসটি।
বেগুনি রঙের বাসটি দূর থেকেই চোখে পড়ে। ৩৭ আসনের এই বাসে বসার ব্যবস্থাও নগরের অন্য দশটি বাসের চেয়ে ভালো। মাথার ওপরের ফ্যান গুলোও এই গরমে কিছুটা স্বস্তিদায়ক। এমনটাই মনে করেন সাদিয়া।
সিটি কলেজের ছাত্রী মৌসুমী বলেন, ‘প্রথম দেখায় বাসটি ভালো লেগেছে। তাই উঠে পড়েছি। নারীদের জন্য আলাদা আরও বাসের দরকার। এতে নারীদের ভোগান্তি এবং হয়রানি কিছুটা কমবে।’
দোলনচাঁপার কয়েকজন যাত্রী জানালেন, গণপরিবহনে ওঠার অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। চালকের সহকারীরা ওঠা-নামা করার সময় গায়ে হাত দেন। খারাপ ব্যবহার করেন। আবার যাত্রীর চাপ থাকলে নারী যাত্রীদের বাসে উঠতে দিতে চান না। পুরুষ সহযাত্রীরাও নানান রকম হয়রানি করে থাকেন। নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা এসব ভোগান্তি-হয়রানি কমাতে পারে বলে জানান তারা।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দোলনচাঁপা বাসে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং একটি হেল্পলাইন নম্বরও রয়েছে। সিসিটিভির বিষয়টি বেশ মনে ধরেছে বেসরকারি চাকরিজীবী আফরোজা আলমের। তিনি বলেন, এ বাসটি শহরে চলাচলের উপযোগী করে নামানো হয়েছে। তবে একটি বাস দিয়ে নারীদের চলাচলে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
দোলনচাঁপা সকাল ৭টায় মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ছাড়ে। গন্তব্য মতিঝিল। এ জন্য যাত্রীকে দূরত্বভেদে ভাড়া গুনতে হবে ৭ থেকে ৩০ টাকা। যানজট বেশি থাকলে চারবার যাওয়া-আসা করা যায় বলে জানালেন বাসটির চালক মো. হাসান শিকদার।
তবে দোলনচাঁপার কথা এখনো মানুষ তেমনভাবে জানেন না। চলাচলের নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচিও নেই। এখনো কোথাও কাউন্টার বসেনি। সে জন্য যাত্রী এখনো তেমন হয় না বলেও জানান চালক। স্বাভাবিক সময় যাত্রীসংখ্যা ১৫-২০ হলেও ছুটির দিনে এ সংখ্যা ৪-৫ জনে নেমে আসে।
অন্যান্য বিষয়ের আগে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করেন বাস পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে গাড়িতে সিসিটিভি এবং জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/মাম/-আসচৌ/আহো/০৯৪৫/ওজি