মন্ত্রিসভায় শ্রম আইনের (সংশোধন) খসড়া অনুমোদন

1113

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : শ্রমিকদের জন্য শ্রমবান্ধব এবং সুশৃঙ্খল মালিক-শ্রমিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উৎপানশীলতা বৃদ্ধির জন্য আজ মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন- ২০১৮ এর খসড়ায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিংকালে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আইএলও (বিশ্ব শ্রম সংস্থা) ’র কনভেনশন অনুযায়ী এটাকে (শ্রম আইন) আপডেট করার জন্য অর্থাৎ শ্রমবান্ধব পলিসি সব জায়গায় যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সচিব বলেন, আইএলওর পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে শিল্প কারখানার যেকোন সমস্যার সমাধানে মালিক, শ্রমিক ও সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে।
একইসঙ্গে খসড়ায় মালিক-শ্রমিকদের যেকোন অসদাচারনের জন্য কঠোর শাস্তির প্রবিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড করা হয়েছে। আগে কারাদন্ডের মেয়াদ ছিল ২ বছর।
শফিউল জানান, বলপ্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোনো স্থানে আটক রাখা, শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বা অন্য কোনো পন্থায় মালিককে কোনো কিছু মেনে নিতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
শ্রমিকরা বেআইনি ধর্মঘটে গেলে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, ধর্মঘট করতে আগে দুই তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থনের প্রয়োজন থাকলেও সংশোধিত আইনে ৫১ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন থাকার কথা বলা হয়েছে।
বেআইনি ধর্মঘট করলে আগে এক বছর কারাদন্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হত। সংশোধিত আইনে সাজা কমিয়ে ছয় মাস করার প্র¯তাব করা হয়েছে। সাজা আগের মত পাঁচ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৬ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এটির অনেক বড় সংশোধন হয়।’
সংশোধিত আইনের খসড়া অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এবং সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কোন শ্রমিককে আহার ও বিশ্রামের বিরতি ব্যতিত ১০ঘন্টার অধিক কাজ করানো যাবে না।
যদিও এই সংশোধিত আইনের খসড়া অনুযায়ী সরকার বিশেষায়িত শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের কাজের সময় পরিবর্তন করতে পারবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খসড়া অনুযায়ী শ্রমিকদের উৎসব ভাতা প্রদান করা ও নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ৮ সপ্তাহ ছুটি প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করার তিন দিনের মধ্যে তাঁরা এই ছুটি এবং অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।
তাছাড়া, সন্তান সম্ভবা মা’কে মাতৃত্বকালীন ছুটি বঞ্চিত করলে মালিক পক্ষকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডের সম্মুখীন করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।
সচিব বলেন, কোনো কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার কক্ষ রাখতে হবে, সেখানে বিশ্রামেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে।
শফিউল জানান, শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পারে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবেন। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এক দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ক্ষতিপূরণ মজুরি দিতে হবে।
কোন শিশু-কিশোর বা প্রতিবন্ধী শ্রমিককে বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ শব্দটি শ্রম আইন থেকে বাদ দিয়ে সেখানে ‘কিশোর’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী সরকার শ্রম সংগঠনগুলোর রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি আদর্শ কার্যপ্রণালী পদ্ধতি (এসওপি) প্রস্তুত করবে। নির্দিষ্ট ফর্মে রেজিস্ট্রেশনের জন্য শ্রম সংগঠনগুলোর আবেদনের শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে তা ৫৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তিযোগ্য হবে।
একটি শিল্প কারখানার একজন শ্রমিক কেবল একটি ট্রেড ইউনিয়নেরই সদস্য হতে পারবেন। একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে এক মাসের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন আইনে প্রধান পরিদর্শকের পদকে হালনাগাদ করে মহাপরিদর্শক এবং উপ-প্রধান পরিদর্শকের পদকে অতিরিক্ত প্রধান পরিদর্শক করা হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম-মহাপরিদর্শক, উপ-মহাপরিদর্শক এবং সহকারি মহাপরিদর্শক ছাড়াও বেশি কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।