মানুষকে রক্তের বাঁধনে বাঁধা তাদের চেষ্টা

654

মেহেরপুর, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : জেলায় ওরা ক‘জন অবসর সময়ে ‘আজকের ভালো কাজের’ জন্য মেহেরপুরের পরিচিত মুখ। সংখ্যায় ওরা মাত্র ৫ জন। মানুষকে রক্তের বাঁধনে বাঁধার তাদের প্রাণান্ত চেষ্টা। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ওরা বিভিন্ন বয়সের প্রায় এক হাজার মানুষকে রক্ত দিয়েছে। কখনো নিজেদের কখনো তাদের তালিকায় থাকা সাড়ে ৪ হাজার স্বজনদের শরীরের রক্ত। এরা হলো মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের আল ইকরাম সোহাগ, আসিফ ইকবাল শুভ ও তুহিন আহমেদ, মেহেরপুর জেলা শহরের আফসানা বিশ্বাস তিথি ও নাসিমুল জুনায়েদ। এরা মেহেরপুর পৌর কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পাঁচজনের এরা নিজেরাই একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ‘আজকের ভালোকাজ’ নামে বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তাদের আজকের ভালোকাজের মধ্যে রক্ত দেয়ার পাশাপাশি অতি দুস্থদের খুঁজে বের করে তাদের আহারের ব্যবস্থা করা, বিশেষ দিবসে নতুন পোশাক দেয়া। নিজেদের প্রতিদিনের জমানো টাকা থেকেই তারা এমন সেবা দিচ্ছেন। কোন দাতা নেয় না এরা। মেহেরপুর পৌর কলেজের সহপাঠিরা এদের ‘ফাইভ স্টোন’ নামে ডাকে। ফেসবুকেও কেউ রক্তের আবেদন করলেই এরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে রক্ত দিতে সাড়া দেয়। প্রদিনিই তারা তিন চারজনকে রক্ত দেয়।
এদের টিমলিডার আল ইকরাম সোহাগ বলেন- একজনের দানকৃত রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচে। তাছাড়া যাদের রক্ত দিচ্ছি তাদের সাথে একটা রক্তের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এছাড়া রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদান ভীতি দূর হচ্ছে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি আসে। আমি নিজেও ১৪বার রক্তদান করেছি। রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো পৃথিবীর সবোর্চ্চ সেবার অর্ন্তভুক্ত। রক্তনেয়ার আগে চিকিৎসক দিয়ে রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবানুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস -সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবানুর উপস্থিতি ধরা পড়লে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জনের রক্তে জীবানু পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে আফসানা বিশ্বাস তিথি জানায়- প্রথমদিকে তাদের দেখলে রক্তচোষা আসছে বলে পরিচিত জনরা সরে পড়তো। এখন মানুষ রক্তদিতে আগ্রহী হয়েছে। যাদের রক্তদেয়া হয় তাদের তালিকাভুক্ত করা হয় ভবিষ্যৎ বিপদগ্রস্থদের রক্তদানের জন্য। কিন্তু অনেকেই পরবর্তীতে রক্ত দেন না। প্রতি সপ্তাহে পৌর কলেজ চত্বরে বসে কর্ম পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে তাদের সাথে অনেকেই যোগ হতে চাচ্ছে। কিন্তু দলে ভারি হলে মতবিরোধে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে আশংকায় তারা সদস্য বাড়াচ্ছেনা বলেও জানায়।
টাকার উৎস
তাদের টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইল নাসিমুল জুনায়েদ জানান- তাদের পঁচজনের জমানো টাকায় গরিবের গাভি ছাগল কিনে দুস্থ পরিবারে পালন করতে দেয়া আছে। এসব ছাগল বিক্রির লাভের টাকা যেসব দুস্থ পরিবারের রক্তের ব্যাগ কেনার সামর্থ থাকেনা তাদের আর্থিক সহায়তায় দেয়া হয়। এছাড়া তাদের কাজের প্রতি সমর্থন করে আর্থিক এবং অন্যান্য সহযোগিতা করে তাদের বন্ধু তুষার, তুহিন, শাওন, রাব্বি, হাসান, সোহেল, লিখন, জাহিদ, মামুন, শিমুল, মুন্না, খন্দকার মুইজ, কামাল, মশিউর ও আকরাম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
চাকুরী করলে মানুষের বিপদে পাশে থাকতে পারবে না। এজন্য এরা বিপদগ্রস্থ মানুষের সেবা করতে চাকুরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে তারা সকলেই ব্যবসার সাথে জড়াবে। তবে এনজিও ব্যবসা নয়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায় ডা. মিজানুর রহমান জানান- ‘আজকের ভালোকাজ’ নামের সংগঠনটি মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রতিদিনই রক্তদিচ্ছে। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই রক্তদিতে আর ভয় করেনা। রক্তর প্রয়োজনে আমরাও তাদের সাথে যোগাযোগ করি।