এলডিসি উত্তোরণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেগোসিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে হবে

988

ঢাকা, ২৯ মে, ২০২১ (বাসস) : অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেগোসিয়েশন দক্ষতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্য ও বাজার বহুমূখীকরণ, মানবসম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নয়ন এবং কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের জোর সুপারিশ করেছেন।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পন্নোনত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম,বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এলডিসি ইউনিট অফ দি ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান তৌফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, উদ্যোমী জনগনের কারণে বাংলাদেশ আজ এলডিসি হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। তবে এলডিসি উত্তোরণ নিয়ে ভীত হওয়ার কারণ নেই। তিনি জানান, চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সত্বেও সারা পৃথিবীতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় নিজেদের আধিপত্য বজায়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব একটি বৃহৎ বাজার রয়েছে। এলডিসি উত্তোরণের পর দেশে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না বলে তিনি মনে করেন। তবে উত্তোরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতেযোগি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর জন্য সরকার ও বেসরকারিখাতকে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আহমদ কায়কাউস এশিয়া ও আঞ্চলিক বাজারের প্রতি মনোনিবেশ বাড়ার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা ও শিল্পায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে, যার ফলে সারাবিশে^র ১০টি গ্রীণ কারখানার মধ্যে ৭টিই আমাদের দেশে রয়েছে। তিনি জানান, এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা নিশ্চিতকল্পে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে, যেখানে ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং এর জন্য আমাদের যথেষ্ট সময় রয়েছে। আমাদের সামনে এখনও পাঁচ বছর সময় আছে। তিনি মানবসম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণের জন্য সকলকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি জানান, ২০২৬ সালের পর আরও ১২ বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ১১টি দেশের সাথে পিটিএ এবং এফটিএ চুক্তির জন্য কাজ করছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ দ্রুত বিনিয়োগ উপযোগি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি নিটওয়্যার ও ওভেন শিল্পের ভ্যালু এ্যাডিশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও এলডিসি পরবর্তী সময়ে টিকে থাকার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের আরো বিকাশ একান্ত অপরিহার্য বলে মত দেন তিনি।
এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সুযোগ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। একইসাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষতার সাথে নেগোসিয়েশন নিশ্চিতকল্পে দক্ষ নেগোশিয়েটর তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি বলে মত দেন তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পন্নোত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। একইসাথে তিনি রপ্তানি বাণিজ্যের ঘাটতি কমাতে রিজিওনাল কানেক্টিভিটিসহ কৌশলগত পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন।