বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় কিস্তি) : বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রেতাত্মারা দেশের শান্তি ও প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে : প্রধানমন্ত্রী

398

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় কিস্তি)
শেখ হাসিনা-ছাত্রলীগ
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রেতাত্মারা দেশের শান্তি ও প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে : প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা রাজনীতির জন্য জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কথা চিন্তা করে, তাদের কল্যাণের কথা ভেবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যারা রাজনীতি করেন ইতিহাস তাদেরই স্বীকৃতি দেয়। ইতিহাস তাদেরই মর্যাদা দেয়। ইতিহাসে তাদেরই নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে এবং শত চেষ্টা করেও সে নাম মোছা যায় না। আর সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সমকালীন রাজনীতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, অথচ একজন রাজনীতি করেন শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, কেউ রাজনীতি করেন রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য, কেউ করেন সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদর্শবানদের রাজনীতি শুধু অনুকরণ নয়, অনুশীলনের চেষ্টা করলেই দেশকে কিছু দেয়া যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, একজন রাজনীতিকের জীবনে শুধু এই চিন্তা-চেতনাই থাকা উচিত- কি পেলাম কি পেলাম না, রাজনীতি শুধু সে হিসেব কষার জন্য নয়, কি মূল্যায়ন পেলাম সে হিসেব কষার জন্য নয়, কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু মানুষকে দিয়ে যেতে পারলাম- সেখানেই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। সেটাই সব থেকে বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, এইভাবে চিন্তা করে যারা রাজনীতি করে তাঁদের কিছু চাইতে হয় না, ইতিহাস তাঁদের মূল্যায়ন করে।
বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী বেগম মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতা কেবল সারা জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু নিজের মর্যাদা নিয়ে কখনও চিন্তা করেননি। যে কারণে এদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও তিনি ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের বাড়িতেই একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন কাটিয়ে গেছেন।
ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে যিনি কঠিন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, তিনিই ইতিহাস সৃষ্টি করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রযোজনে এই মহীয়সী নারীর কিছু যুগান্তকারী ভূমিকারও উল্লেখ করেন।
বেগম মুজিবের একটি সিদ্ধান্ত বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের পেক্ষাপট স্মরণ করে বেগম মুজিবের পরামর্শে জাতির জনকের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে না যাওয়ার স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, পাকিাস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। অথচ, আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোন প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে কোন মুক্তি হবে না। প্যাারোলে মুক্তি নিলে মামলার আর ৩৪ জন আসামীর কি হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ফলে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করে জনমত সৃষ্টির জন্য সারাদেশে জনসভা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আট বার গ্রেফতার হন। তখন কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ৬-দফাকে ৮-দফায় রূপান্তরের চেষ্টা বেগম মুজিবের জন্য ভেস্তে যায়।
তিনি বলেন, ৬ দফা আন্দোলনের সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, কারাবন্দিদের মুক্তির জন্য ৭ জুনের হরতাল সফল করা। সেটাও সফল হয়েছিল বেগম মুজিবের প্রচেষ্টায়। তিনি নিজ বাসা থেকে আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে সেখান থেকে স্যান্ডেল আর বোরখা পরে জনসংযোগে বেরিয়ে পড়তেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম মুজিব পুলিশ ও গোয়েন্দা চক্ষুর আড়ালে দলকে শক্তিশালী করেছেন। বিচক্ষণতার সঙ্গে ছাত্রদের তিনি নির্দেশনা দিতেন এবং অর্থ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেন। এমনকি নিজের গহনা বিক্রি করেও অর্থ জুগিয়েছেন।
ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্র্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দিন নানা জনে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আম্মা তখন তাঁকে একটি ঘরে বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়ে মোড়া টেনে মাথার কাছে বসে বঙ্গবন্ধুকে কিছুক্ষণ চোখটা বন্ধ করে রাখতে বললেন।
আম্মা বললেন, ‘তোমার যা মনে আসে তাই তুমি বলবে। তুমি রাজনীতি করেছো, কষ্ট সহ্য করেছ, তুমি জান কি বলতে হবে। কারও কথা শোনার দরকার নাই।’
চলবে/বাসস/এএসজি-এফএন/২০৫৪/এবিএইচ