করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করছে বিসিক

706

ঢাকা, ২৫ মে, ২০২১ (বাসস) : করোনাকালে অতি ক্ষুদ্র ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ লাগবে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক)।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ২০২৫ সালের মধ্যে দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও ১ কোটি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে বিসিক কর্তৃপক্ষ স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। স্বল্প মেয়াদী কর্মসূচির আওতায় এক লাখ তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাকে বিজনেস ইনকিউবেশন সুবিধা দান করবে বিসিক।
বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাক হাসান বাসসকে জানান, ১ লাখ তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাকে বিজনেস ইনকিউবেশন সুবিধা প্রদান করবে বিসিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিসিক বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিসিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি আরো জানান, বিসিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানের জন্য সারাদেশব্যাপী বিসিকের প্রাতিষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। করোনার প্রভাবে যেখানে দেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানাই বন্ধ সেখানে বিসিকের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাস্থ্য-বিধি অনুসরণ করে বিসিকের ৭৬টি শিল্পনগরীর ২৩৮৪ টি শিল্প ইউনিট নিয়মিতভাবে তাদের পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে যেখানে দেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানাই বন্ধ ছিল সেখানে বিসিকের সার্বিক সহায়তায় বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত শিল্প ইউনিটসমূহে নিয়মিতভাবে করোনা প্রতিরোধকমূলক পণ্য (মেডিকেল অক্সিজেন, পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক), চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, সুজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য, এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, কৃষি যন্ত্রাংশ, কিটনাশক ও স্যার উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদি ২০২৫ সালের মধ্যে ৫,০০০ একর জমিতে বিসিক আরো ১০টি পরিবেশ বান্ধব শিল্প পার্কস্থাপন করে ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নলক্ষ্য মাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে বিসিক ২০,০০০ একর জমিতে ৫০টি তিনি উল্লেখ করেন, বিসিক পরিবেশবান্ধব শিল্প পার্ক স্থাপন করে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করবে। দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৪১ সালে পরিবেশ বান্ধব শিল্প সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ৪০,০০০ একর জমিতে ১০০টি পরিবেশ বান্ধব শিল্প পার্কস্থাপন করে ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বিসিক।
তিনি আরো বলেন, ১০০টি পরিবশে বান্ধব নতুন শিল্প পার্ক স্থাপিত হলে তাতে প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং ৮০ শতাংশ আমদানি বিকল্প পণ্য দেশে উৎপন্ন হবে। এতে করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১,০০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। দীর্ঘ মেয়াদি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমানে ২,০০০ একর জমিতে বিসিক কর্তৃক স্থাপিত ৭৬টি শিল্প নগরী হতে বছরে সরকারকে প্রদত্ত ট্যাক্স ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃক গৃহিত ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবদের ঋণ সহযোগিতা প্রদান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা স্মারকের আওতায় কর্মোদ্যোগ হিসেবে বিসিক হতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুবদের (১৮-৩৫ বছর বয়সী) স্বল্পসুদে (৯ শতাংশ সরল সুদে) ২০ হাজার টাকা হতে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি করছে বিসিক।
বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান আরো জানান, তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক ব্যবসা উন্নয়ন সেবাসমূহ প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আরো উন্নত সেবা প্রদানের অংশ হিসাবে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গুলিকেও কাজে লাগোনো হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাইলট ভিত্তিতে গোপালগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার আওতাধীন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।