কুমিল্লার খাদি কাপড়ের পোশাকের বাজার বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে

526

কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১১ মে, ২০২১ (বাসস) : ঈদ সামনে রেখে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড় পোশাকের বাজার বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। নগরের রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও লাকসাম সড়কের অর্ধশতাধিক খাদি পণ্যের দোকানে প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।
সরেজমিন বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে মানসম্মত খাদি পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শর্ট পাঞ্জাবি। মেয়েদের কাছে শর্ট ফতুয়া ও থ্রি পিসের চাহিদা একটু বেশি। শিশুদের ফতুয়াও বিক্রি হচ্ছে দেদার। সেই সঙ্গে খদ্দরের বাটিকের শাড়ি, থানকাপড়, বেডশিট বা বিছানার চাদর, জানালার পর্দার কাপড়ও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রোজার শুরুর দিকে অনেকেই খাদির পাঞ্জাবি ও ফতুয়া কিনে বিদেশে থাকা তাঁদের স্বজনদের জন্য পাঠিয়েছেন।
তবে চাহিদা বাড়লেও সেই তুলনায় দাম তেমন বাড়েনি বলে বিক্রেতারা যেমন দাবি করেন, তেমনি ক্রেতাদেরও এ নিয়ে অভিযোগ তুলতে দেখা যায়নি। নগরের মনোহরপুর এলাকার বিশুদ্ধ খদ্দর ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার দত্ত বাসসকে বলেন, এবার রং ও বৈচিত্র্যে একটু ঢং আনার কারণে খাদির শর্ট পাঞ্জাবি কেনার ধুম পড়েছে। ফতুয়ারও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কান্দিরপাড়-লাকসাম সড়কের পূর্বাশা খাদি, জোসনা স্টোর, খাদি নীড় ও খাদি নিলয়, মনোহরপুরের আবরণী ও প্রসিদ্ধ খাদি ঘর এবং রাজগঞ্জ, মনোহরপুরের বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রং আর ডিজাইন বা নকশাভেদে খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি ৪৫০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা, ফতুয়া ২২০ থেকে ৫৫০ টাকা, মেয়েদের শর্ট ফতুয়া ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা ও থ্রি পিস ৪৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাদির থানকাপড়ও প্রতি গজ ৬০ থেকে ২৫০ টাকা দামে ব্যাপকহারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ক্রেতাদের অনেকেই বাসসকে জানান, দেশীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই তাঁরা স্থানীয় এ ব্র্যান্ডের (খাদি) পোশাক কিনছেন। শহরতলির দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমা আক্তার দুই মেয়ে ও কলেজ শিক্ষক স্বামীর জন্য ফতুয়া কিনে জানালেন, ঈদ আমাদের বড় উৎসব। এর সঙ্গে দেশীয় ঐতিহ্যের পোশাক খাদি বাড়তি আনন্দ দেবে। দেবিদ্বার উপজেলার ছোটনা গ্রামের মোশারফ হোসেন বাসসকে বলেন, চেতনা থেকেই আমি সব সময়ই খাদি কাপড়ের পোশাক পরে থাকি। খাদি ঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কান্তি রাহা বলেন, ঈদ উৎসবে দিন দিন খদ্দর (খাদি) কাপড়ের পোশাকের ব্যবহার বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদর, মাধাইয়া, কলাগাঁও, বেলাশ্বর, সাইতলা, বাখরাবাদ, পিইর ও গোবিন্দপুর এবং দেবীদ্বারের বরকামতা ও ভানী প্রভৃতি গ্রামের বিপুলসংখ্যক হিন্দু পরিবার বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদি কাপড় তৈরি করে আসছে।