টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকবে

363

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার (অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ) সুযোগ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তার মতে, এ সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হলে দেশের বাইরে টাকা পাচার হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনের সভাকক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সভায় আবাসনখাতের সংগঠন রিহ্যাব, ওষুধ শিল্প সমিতি, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন, অটো রি-রোলিং মিলস এসোসিয়েশন, ইট-পাথর ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন লিংকেজ শিল্পের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ সংগঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
আলোচনার শুরুতে রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বিনা প্রশ্নে পাঁচ বছরের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে এ সুযোগ থাকলেও দুদকসহ অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে পারে। এ ভয়ে আবাসন খাতে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিদেশে সেকেন্ড হোমের সুযোগ নিচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯বি ধারা পুনর্বহাল করে ইনডেমিনিটি দিতে হবে।
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অপ্রদর্শিত আয় বর্তমানে জরিমানা দিয়ে বৈধ করার সুযোগ আছে। এটা বন্ধ করে দেব না। এটা বন্ধ করে দিলে টাকা বাইরে চলে যাবে। এছাড়া দেশের বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে। এসব বিবেচনায় আগামী বাজেটেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানে একটি ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া আছে। ১৯ই ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যেকোন খাতেই কালো টাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯ বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে। এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। এক্ষেত্রে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।
এছাড়া ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ট্যাক্স ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ, ভ্যাট হার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ নির্ধারণ, বাড়ী বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক করহার হ্রাস, সাইনিং মানির ওপর উৎসে কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ, সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে উৎসে কর ও উৎসে ভ্যাট আদায় পদ্ধতি প্রত্যাহার এবং নগরায়ন বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবি জানায় রিহ্যাব।
অন্যদিকে অটো রি-রোলিং মিলের এসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে রডের দাম বাড়ছে। দাম সহনীয় রাখতে স্ক্র্যাপ আমদানিতে ডিউটি প্রত্যাহার এবং অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি।
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কী উপায়ে রডের দাম কমানো যায় সেটি বিবেচনা করা হবে।
সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ বলেন, সিমেন্ট তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ক্লিংকারের ব্যবহার হয়। এখন টনপ্রতি ৫০০ টাকা ডিউটি দিতে হয়। এটিকে ২০০ টাকা করা উচিত। তাহলে সিমেন্টের দাম কমে আসবে। এছাড়া রেডি মিক্স ক্যারিয়ার আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি।
ইট প্রস্তুতকারক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান খান অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ডের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন।
প্রাক-আলোচনায় এনবিআরের শুল্কনীতির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, ভ্যাটনীতির সদস্য রেজাউল হাসান ও আয়কর নীতির সদস্য কানন কুমার রায়সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।