জুরাছড়িতে সৌর বিদ্যুতের আলোয় কৃষিক্ষেত্রে সফলতা

237

রাঙ্গামাটি, ৮ মে, ২০২১ (বাসস) : জেলার পাহাড়ী অঞ্চল জুরাছড়ি উপজেলায় সৌর বিদ্যুতের আলোয় কৃষি ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে।
এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। সরকারে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে বিদেশী দাতা সংস্থার সহায়তায় সৌর পাম্পের মাধ্যমে চাষাবাদ করার সুযোগ পাওয়ায় উপজেলায় প্রায় ৬০-৭০ হেক্টর অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে পেরেছে কৃষক।
প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটে বোরো চাষিরা তাদের জমিতে আশানুরুপ বোরো চাষ করতে পারতনা। এতে জুরাছড়ি প্রায় ৬০-৭০ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যেতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই সৌর পাম্পের মাধ্যমে চাষাবাদ কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সিসিআরপির সূত্রে জানা যায়, ডেনমার্ক ভিত্তিক সহায়তা প্রতিষ্ঠিান ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (ডানিডা) অর্থায়নে এসআইডি-সিএইচটি, ইউএনডিপির সহায়তায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্প রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করছে।
এ প্রকল্পটি পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প (সিসিআরপি)। এ প্রকল্পের আওয়াতায় জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের তোন্যাবীছড়া জলবায়ু সহনশীল কমিটির মাধ্যমে কৃষি সেচ ব্যবস্থায় সৌর প্যানেল ও পাম্প এবং সীড ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জুরাছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা তপন চাকমা জানান, উপজেলার সীতারাম পাড়া, সাপছড়ি পাড়া, পূর্ব সাপছড়ি, লুলাংছড়ি প্রতিটি পাড়ায় একটি করে নয়টি সোলার বিশিষ্ট ৩ হাজার ওয়ার্ট শক্তি সম্পন্ন সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিটি প্যানেলে রয়েছে একটি করে সোলার পাম্প। সকালে রোদ উঠার সাথে সাথে শুরু হয় জমিতে পানি তোলা। এটি বিকেল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
এছাড়াও এ প্রজেক্টের ফলে পাহাড়ে এখন আর জনসাধারণকে অন্ধকারে বসে থাকতে হয়না, সৌর আলোর মাধ্যমে পাহাড়ের প্রতিটি এলাকা এখন আলোকিত থাকে।
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন দুূর্গম পাহাড়ী এলাকার শিশুরা রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে,আবার কেউ সারা দিন কৃষি কাজসহ অন্যান্য পেশার কাজ শেষে ব্যস্ততা কাটিয়ে রাতে টেলিভিশন দেখছে। অনেক নারীরা রাতে সৌর আলো ব্যবহার করে নিজেদের ও বিক্রয়ের জন্য তাঁত বুনন করছে। মোটামুটি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলার দুূর্গম পাহাড়ী এলাকার চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে।
এ বিষয়ে উজেলার চালকা পাড়ার লক্ষী দেবী (৪০) বলেন, রাতে অবসর সময়ে সৌর আলো ব্যবহার করে কোমর তাঁত বুনন করি। ১০/১৫ দিনে একটি তৈরী হয় কাপড়। প্রতিটি কাপড় বাজারে বিক্রি হয় ৩-৪ হাজার টাকা। এসব টাকায় ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করি। একই চিত্র উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে ও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুম্মিতা চাকমা বলেন, সোলার প্যানেল ও সৌর পাম্প স্থাপনের কারণে উপজেলায় কৃষকের অনেক অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। যার মাধ্যমে অনেক পরিবারের খাদ্য জোগান তৈরী হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশিক চাকমা বলেন, প্রান্তিক এলাকায় প্রতিটি ঘরে ঘরে সৌর প্যানেল স্থাপনে শিশুদের পড়া-লেখার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার স্কুলগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে কম্পিটার ব্যবহার করা যাচ্ছে পাশাপাশি এর মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী কমৃকর্তা জিতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, সরকারের বিনামূল্যে সোলার বিতরণ কর্মসূিচ পাহাড়ের মানুষের জন্য খুবই যুগোপযোগী প্রকল্প হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে সোলার স্থাপনে সৌর আলো ব্যবহার করে নারীদের আত্ম-কর্মস্থান তৈরী ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ হয়েছে। এছাড়াও সৌর পাম্প ব্যবহার করে এখানকার অনেক অনাবাদি জমি চাষাবাদ করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন সূত্রে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলায় সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিনামূল্যে সোলার বিতরণের পাশাপাশি প্রায় ১১হাজার পরিবারকে সৌর বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। যার সুফল এখন ভোগ করছেন দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মানুষ।