জনকল্যাণের জন্যই রাজনীতি, ভোটের জন্য নয় : শেখ হাসিনা

2644

ঢাকা, ২৯ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল জনগণের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করে, তাদের ভোটের জন্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি জনকল্যাণের জন্য, ক্ষমতা আমাদের কাছে কোন ভোগের বস্তু নয়, এটা আমাদের দায়িত্ব। জাতির পিতা সে শিক্ষাই দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং গোপালগঞ্জের পার্শ্ববর্তী ৮ জেলার ২০ উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।


তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করি জনগণের জন্য। রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। ভোট দেয়া না দেয়া এটা জনগণের অধিকার। কিন্তু জনসেবা করবো, জনগণকে একটু সুখ শান্তি দেব, তাদের রোগে চিকিৎসা দেব, তাদেরকে একটু উন্নত জীবন দেব, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো-এটাতো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমাদের অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, কি অদ্ভুত আমাদের দেশের মানুষের চরিত্র যে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালের পর ক্ষমতায় এসেই এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিল। শুধু এই একটা অযুহাতে যে এই ক্লিনিকে যারা কাজ করবে এবং যারা স্বাস্থ্যসেবা পাবে, তারা সব নৌকায় ভোট দেবে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি, ক্ষমতায় আসলো বিএনপি-জামায়াত জোট। তারা ক্ষমতায় এসেই এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করলো।
স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে প্রতিটি গ্রামে অন্তত ১০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে এই স্বাস্থ্যসেবা আধুনিকায়নের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ২০ উপজেলার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.জাহিদ মালিক এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।


এছাড়া, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দিন মোহাম্মদ নুরুল হক এবং ভারতের মুম্বাইয়ের অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতালের চেয়ারম্যান আর. ডি. রবীন্দ্রান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচির আওতায় গ্রাম বাংলার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় চক্ষু চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ন্যাশনাল আই কেয়ার যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এর অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে এই চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ২০ উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। অরবিন্দ আই কেয়ার সিষ্টেম ভারত থেকে সরবরাহকৃত আধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলোতে চক্ষু চিকিৎসা পাবে জনগণ।
পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই কমিউনিটি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সরকারের রয়েছে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর আওতায় হতদরিদ্র রোগীদের চক্ষু চিকিৎসার জন্য ২০ কোটি টাকার একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠনেরও ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানে।
কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপিত ২০ উপজেলা হচ্ছে- গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী এবং মকসুদপুর, বাঘেরহাটের ফকিরহাট, নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া, মোল্লারহাট, চিতলমারি,রামপাল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর, আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারি, খুলনার রূপসা, দিঘলিয়া, তেরোখাদা, মাদারিপুরের রাজৌর, পিরোজপুরের নাজিরপুর ও রাজবাড়ির গোয়ালন্দ।

চক্ষু চিকিৎসার এই প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক চক্ষু রোগী, রেটিনোপ্যাথি, কিশোর চক্ষুরোগ, চোখের আঘাতসহ অন্যান্য চক্ষু রোগ সনাক্ত করা এবং এর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হবে এসব সেন্টারে। এরপর আরো উন্নত সেবার জন্য তারা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে।


চক্ষু রোগে আক্রান্তদের সচেতনতা ও চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি চক্ষু চিকিৎসকসহ এ সেবায় জড়িতদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছি অন্ধজনে দাও আলো। এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু হতে পারে না।
তিনি বলেন, এক জন মানুষের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে, সে তার আপনজনকে দেখবে, এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখবে, এটা অনেক বড়, মানবতার কাজ।
এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে আজীবন ত্যাগ স্বীকার করে যাওয়া মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় মনে রাখি যে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই জনগণের সেবা করাটাই আমার প্রথম কর্তব্য। মানুষের সেবা করাটাকে আমি কর্তব্য হিসেবে নেই।
তিনি বলেন, নতুন নতুন যেসব হাসপাতাল হচ্ছে সেগুলোতে অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্স আছে। তারা ভালো মানের সেবা দিতে পারছে। হাসপাতালের পাশাপাশি আরো ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ নার্স তৈরির কাজ চলছে। দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এখন বিদেশ থেকে নার্স এবং ডাক্তারদের ট্রেনিং দিয়ে আনা হচ্ছে।
প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আরও মানসম্মত হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলেন জানান তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা জেলা পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ করেছি। দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি। দুটো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে করা হয়েছে। আরো একটা করার পরিকল্পনা আছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে আমাদের লক্ষ্য, প্রতিটি ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারে আমরা একটা করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার ৯ মাসের মাথায় একটি সংবিধান জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি প্রদেশকে একটি দেশের রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বেশি সময় না পেলেও রাষ্ট্রের এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি একথা উল্লেখ করে বিস্ময় প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া।
তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়েছে, যা ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে।’