একুশে আগস্ট হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর

555

ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌসুঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান আজ আসামী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক পেশের প্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলের খুব কাছেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের অফিস হওয়ার পরও ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল একবারের জন্যও পরিদর্শনে যাননি তিনি।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগষ্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। আজ ছিল এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১১১তম দিন। বাবরের পক্ষে আজ সপ্তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। এ আসামীর যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হলে আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ সমাপ্ত হবে। আগামীকাল ২৯ আগষ্ট মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
আজ মামলার আইও আবদুল কাহ্হার আখন্দের (পিডব্লিও-২২৫) সাক্ষ্য থেকে আসামী বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। এ যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম কাল বুধবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
আসামী বাবরের আইনজীবী তার যুক্তিতর্কে দাবি করছেন তার মক্কেল ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান আসামীপক্ষের যুক্তির প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেন যে, ‘আসামী বাবর ২১ আগষ্ট ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাষ্ট্রপক্ষ তা সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’
আদালত আজও আসামী বাবরের আইনজীবীকে সাক্ষ্য ও জবানবন্দি থেকে প্রাসঙ্গিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তাগিদ দিয়েছে। আসামী বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম আদালতে বলেন, কাল বুধবার বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক তিনি শেষ করবেন। তারপর বাবরের পক্ষে ল’পয়েণ্টে পরবর্তী ধার্য তারিখে অন্য একজন আইনজীবী যুক্তি পেশ করবেন।
সৈয়দ রেজাউর রহমান আজ মামলা যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য উত্থাপিত হলে শুরুতেই বলেন, আজ এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১১১ তম দিন। এরমধ্যে টানা ৮৬ কার্যদিবস আসামীপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এরআগে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে।
রাষ্ট্রপক্ষে অপর আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ২১ আগষ্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা পৃথক মামলার বিচার এখন একবারেরই শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌসুঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো.আবু আব্দুল্লাহ্ ভ্ুঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এডভোকেট ফারহানা রেজা, এডভোকেট আমিনুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এডভোকেট আমিনুর রহমান বাসস’কে জানান, ২১ আগষ্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামীর অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩ আসামী হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামীর বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। বাবর, সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন আসামী কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষ সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দেও জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিচারের মুখোমুখী থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য বেশ ক’জন নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।