চরের নারী-শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় ভরসা ‘পদ্মা সেতু স্বাস্থ্যকেন্দ্র’

1995

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : পদ্মা সেতু! স্বপ্নের সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে উন্মোচিত হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, দেশের অর্থনীতিতে আনবে নতুন গতি। এ সেতুকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত ‘পদ্মা সেতু স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ হয়ে উঠেছে এলাকার স্বাস্থ্য সেবায় ভরসার প্রতীক। পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন দিগন্ত ‘পদ্মা সেতু স্বাস্থ্যকেন্দ্র’। চরাঞ্চলের মানুষের এই কেন্দ্র পরিণত হয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ পাওয়ার ফলে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষজন উপকৃত হচ্ছেন।
স¤প্রতি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত পুনর্বাসিতদের জন্য নির্মিত হলেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সেবা পাচ্ছেন আশপাশের এলাকার মানুষও।
জানা যায়, সরকারি ছুটির দিন বাদে সব সময়ই খোলা থাকে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক, একজন সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও একজন ফার্মাসিস্টসহ মোট নয় জনের একটি টিম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে পুরো স্বাস্থ্যসেবা মিলছে বিনামূল্যে। ওষুধও পাওয়া যায় বিনামূল্যেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রান্তিক জনপদের দোরগোড়ায় মা ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। এতে চরাঞ্চলের হাজার হাজার নারী-শিশুসহ অন্যান্যদেরও উপকার হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবেশ বেশ পরিচ্ছন্ন ও গোছানো। চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কক্ষ, রুগীদের জন্য ওয়েটিংরুম, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ, আইটি কক্ষ, রোগীদের কক্ষও বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে রয়েছে মনোমুগ্ধকর বাগান।
বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা ও মুদি দোকানি সোলায়মান মিয়া বলেন, ঘরের কাছে এমন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকায় অনেক উপকার হচ্ছে এলাকার মানুষের। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের চিকিৎসাসহ জরুরি সেবাগুলো সহজেই এখান থেকে পাওয়া যায়। ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা মেলে বিনামূল্যে। যে কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পদ্মা সেতু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের শিবচরের বাখরেরকান্দি পদ্মাসেতু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বেসরকারি সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পদ্মাসেতু প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সেবা নিশ্চিতের জন্য স্থাপিত হলেও আজ চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘ঘরের হাসপাতালে’ পরিণত হয়েছে এটি।
এ হাসপাতালে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ ও কার্যক্রম, টিকাদান কর্মসূচিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
এছাড়া স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার প্রচারাভিযান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক মাসিক আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়। সপ্তাহে একদিন চক্ষু চিকিৎসাসেবাও দেয়া হয়। সেদিন ওই হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসেন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা আমেনা বেগম বলেন, ঠান্ডা-জ্বর হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। এখানে চিকিৎসা ও ওষুধ ফ্রি পাওয়া যায়। বাড়ির কাছে এমন একটি হাসপাতাল থাকায় আমাদের আর দূরে যাওয়া লাগে না।
তিন বছরের নাতিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ আবদুল হাই। জানালেন, আগে জ্বর, সর্দি-কাশি হলে সদরের হাসপাতালে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর সদরে যাওয়া লাগে না। বাড়ির কাছেই হাসপাতালে চলে আসেন।
‘নাতির জ্বর অইছে তারে নিয়া আইলাম ডাক্তার দেহাইতে। কোনো ট্যাহা লাগে না। ফ্রি ওষুধ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওন যায়। এতে আমাগোর উপকার হইছে,’ বলে উল্লেখ করেন আবদুল হাই।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত তিনবছরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৭ হাজার ১৬৯ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৮৯ জন নারী ও ৬ হাজার ৩৫ জন শিশু রয়েছে।
পদ্মা সেতু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র দাস জানান, দৈনিক সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, এর মাঝে বিভিন্ন ধরনের অসুখের প্রাথমিক চিকিৎসাসহ নারী ও শিশুদের টিকা এবং গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়া হয়।
‘প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নেন। তাদের বিনামূল্যে ওষুধও সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে আমাদের এখানে ডায়াবেটিস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।’
ভবিষ্যতে প্যাথলজিক্যাল সেবাও পাওয়া যাবে বলে জানান প্রতাপ চন্দ্র দাস।