পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে মালিকরা

333

ঢাকা, ১১ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : কোভিড অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লকডাউনের মধ্যে কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা। তারা বলেছেন, কারখানা বন্ধ হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হবে। এতে বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিযোগি দেশে চলে যাবে এবং দেশের পোশাকখাত বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরতে গিয়ে উল্টো সারাদেশে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। রোববার পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ তীব্র হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের পরিকল্পনা নিয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সব কিছুই বন্ধ থাকবে। কারখানা বন্ধ হলে দেশের রপ্তানিতে ‘মারাত্মক নেতিবাচক’ প্রভাব পড়বে দাবি করে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদেরকে ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। সেই অনুযায়ী উৎপাদন ও জাহাজীকরণ পূর্ব নির্ধারিত থাকে। তাই এই খাতগুলোতে লকডাউন কার্যকর হলে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্ষয়ের ঝুঁকি রয়েছে।’ তিনি বলেন, সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কনটেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রতিযোগি দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ বাজার হারাবে। আসন্ন কঠোর ‘লকডাউনেও’ পোশাক শিল্পকে আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বসহ প্রতিযোগি দেশগুলোতে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো ‘লকডাউনের’ আওতামুক্ত।
আবদুস সালাম বলেন, গত বছর সাধারণ ছুটি ও পরবর্তীতে দুই ঈদে শ্রমিকদের আবাসস্থল ত্যাগ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উপেক্ষা করা যায় না। লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক শহর ছাড়তে পারেন। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এবার মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সীমিত পরিসরে যে ‘লকডাউন’ চলছে, তার আওতামুক্ত রাখা হয় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে।
বিজিএমইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দাবি করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাক শিল্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। পোশাক কারখানা মালিক ও কর্মকর্তা পর্যায়ের দু’একজনের মৃত্যু হলেও শ্রমিক পর্যায়ের কারও মৃত্যুর খবর তাদের জানা নেই। মহামারিকালে সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে দুইটি বড় ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। কারখানা বন্ধ থাকলে দুই ঈদে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। তাই সরকারের সকল ধরনের নির্দেশনা ও সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা লকডাউনমূক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল-উল আলম চৌধুরী পারভেজ,বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।