স্বাধীন মত প্রকাশ বন্ধে ডিজিটাল আইন করা হয়নি : সজীব ওয়াজেদ জয়

729

ঢাকা, ১৫এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন,স্বাধীন মত প্রকাশ বন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা (আইসিটি) আইন করা হয়নি বরং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করতেই এই আইন করা হয়েছে।
তিনি বলেন,‘স্বাধীন মত প্রকাশ করা একজন মানুষের নাগরিক অধিকার। তবে বিভ্রান্তিকর কোন খবর বা গুজব দ্বারা যেকোন ব্যক্তি বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর খবর বা বক্তব্য আমরা প্রকাশ করতে পারি না। এটি স্বাধীন মত নয়, ঘৃণা ছড়াতেই করা হয়ে থাকে।এ ধরনের বিদ্ধেষ ছড়ানো বন্ধ হওয়া উচিত। যারা এটি করছে-তাদেরকে অব্যশই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি দ্রুত সংসদে পাস করার আহ্বান জানান তিনি।
রোববার দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দু’দিনব্যাপী বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন।
তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক আউটসোর্সিং নিয়ে তৃতীয়বারের মত এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কল সেন্ডার এন্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)। এবার সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক,তথ্যপ্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী,বাক্য সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম আইটি হাব উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’কে কোন খারাপ কাজে ব্যবহার না করার আহবান জানিয়ে বলেন,ফেসবুকে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। এর জন্য আমরা ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারিনা। ইন্টারনেটে বাংলাদেশ থেকে যেন ক্ষতিকর কনটেন্ট না দেখা যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় টুলস উদ্ভাবন ও ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তিনি অনুরোধ জানান ।
তরুণদের চাকরির জন্য অপেক্ষায় না থেকে আইটি খাতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রতিবছর মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে নিয়োগ দেয়।এর বাইরে বিপুল চাকরিপ্রার্থীরা থেকে যাচ্ছে। আমি তাদেরকে বলবো-আপনাদের চাকরির জন্য আর সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিন এবং ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে আইটি সেক্টরে নিজে কর্মসংস্থান করে নিন।’
বর্তমান সরকার প্রাথমিক স্তর থেকে আইটি শিক্ষা প্রদান করছে মন্তব্য করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের সিইওকে (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) খুঁজে পেয়েছি,যারা জানেন না কীভাবে ই-মেইল ব্যবহার করতে হয়। তারা ই-মেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের এসিস্টেন্টের সাহায্য নিয়ে থাকে। আমি চাই দেশের তরুণরা,শিশুরা আগে থেকেই জানবে কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। তারা কম্পিউটারের ভাষা বুঝবে।’
তিনি বলেন,সরকারের কর্ম পরিকল্পনার কারণে মফস্বল বসে তরুণ-তরুণীরা আইটসোর্সিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করছে। সরকার বিদ্যুতের নিশ্চয়তা ও উচ্চগতির ইন্টারনেটে দিচ্ছে বলে এটা সম্ভব হয়েছে।
জয় বলেন,২০০৯ সালে মাত্র ৩’শ মানুষের কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে বিপিও খাতের যাত্রা শুরু হয়। সরকারের কর্মপরিকল্পনায় এই খাতে এখন ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী কর্মরত রয়েছেন। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান,বাংলাদেশের বিপিও ব্যবসার বাজার ইতিমধ্যে ২০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার এই খাত থেকে এক’শ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।
জয় বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠী আমাদের সম্পদ। আমরা একে কাজে লাগানোর জন্য প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। দক্ষ জনবল তৈরি হলে বিশ্বব্যাপী বিপিও খাতের ৫শ’ বিলিয়ন ডলারের যে বাজার রয়েছে সেখানে আমরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পরে তিনি দুই দিনের বিপিও সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ,বর্তমানে সেই সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কেবল গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, ব্যবহারকারীদের জন্যে ইন্টারনেট যেন নিরাপদ হয় সেজন্যেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৫ সালে যে ব্যান্ডউয়িথের দাম ছিলো ৭৫ হাজার টাকা,সরকার এখন তা এক হাজার টাকার নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জানান,তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পৌঁছে দিতে প্রথমবারের মত শিশু প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক জানান,দেশে বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ফ্রি-ল্যান্সার আউটসোর্সিং করছে। সরকার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিকসংখ্যক যুবককে এই কাজে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
উদ্বোধন পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদসহ অতিথিরা সম্মেলন প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
দুই দিনের সম্মেলনে মোট ১০টি সেমিনার ও একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের আয়োজনে ৬০ জন স্থানীয় স্পীকার ও ২০ জন আন্তর্জাতিক স্পীকার অংশগ্রহন করেছে।