বাসস দেশ-৬৬ (লিড) : নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবিতে একজনের লাশ উদ্ধার : ডুবুরিদের অভিযান চলছে

262

বাসস দেশ-৬৬ (লিড)
লঞ্চডুবি
নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবিতে একজনের লাশ উদ্ধার : ডুবুরিদের অভিযান চলছে
নারায়ণগঞ্জ, ৪ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় রাবিতা আল হাসান নামের একটি লঞ্চ ডুবে গেছে।
আজ সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায় নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। এছাড়া আরো দশ বারো জনকে তারা জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে লঞ্চে ত্রিশ-চল্লিশজন যাত্রী ছিলো বলে জানিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্যরা। এ ঘটনায় নিখোঁজ ৬ যাত্রীর নাম জানা গেছে। এরা হচ্ছেন, মুন্সীগঞ্জের মহারানী, মোঃ সোলেমান ও তার স্ত্রী সালমা বেগম, সুনিতা সাহা তার দুই ছেলে বিকাশ সাহা ও অনিক সাহা।
লঞ্চ মালিক সমিতির নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জগামী রাবিতা আল হাসান নামের লঞ্চটি শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় একটি সিষ্টার ভেহিক্যাল এম ভি এস কে থ্রি’র ধাক্কায় ডুবে যায়। লঞ্চটিতে ত্রিশ-চল্লিশজন যাত্রী ছিলো। ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঘটনার পরপর এলাকাবাসি যাদের উদ্ধার করে তাদের একজন দীপু (১৮)। তিনি ইজি বাইকের মেকানিক। তিনি জানান, তিনি তার মা মহারানী (৪০) কে সাথে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। তারা নারায়ণগঞ্জে থাকলেও লকডাউনের কারনে তারা চলে যাচ্ছিলেন।
তিনি জানান, লকডাউনের কারণে অনেকে বাড়িতে ফিরতে থাকায় অন্যদিনের তুলনায় লঞ্চে লোক সংখ্যা বেশি ছিলো। লঞ্চের নিচের ডেকে ষাট-সত্তর জন ছিলো। তবে উপরে কম ছিলো। লঞ্চ চর সৈয়দপুর এলাকায় পৌঁছলে একটি জাহাজ লঞ্চটির কাছাকাছি চলে আসে। লঞ্চের চালক, সুকানিসহ অন্যরা জাহাজটিকে নদীর পশ্চিম পাশে চাপিয়ে যেতে সিগন্যাল দিতে থাকে। লঞ্চটিও চেষ্টা করে নদীর পূর্বপাড়ে চেপে দুর্ঘটনা এড়াতে। লঞ্চের যাত্রীরা জাহাজের গতি ধীর করার জন্য চিৎকারও করতে থাকে। তীর থেকেও অনেকে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু জাহাজটি অত্যন্ত দ্রুতবেগে এসে লঞ্চের সাথে ধাক্কা খায়। ফলে লঞ্চের তলা ফেটে পানি উঠতে থাকে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লঞ্চটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার পরেও জাহাজটি লঞ্চের উপর দিয়ে চলে যায়। দীপু জানায়, সে ডুবে যাওয়া লঞ্চের একটি অংশ ধরে ভাসতে থাকে। এসময় বেশ কয়েকটি ট্রলার তাদের পাশ দিয়ে চলে গেলেও তাদের উদ্ধার করেনি। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটি নৌকা এসে তাকেসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করে।
বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থলে কাজ করছিলো ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরিদের একটি টিম। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেডের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আমরা বিআইডব্লিউটিএকে খবর দেই। আমাদের ডুবুরি দল দুর্ঘটনার শিকার লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মা সালমা বেগম (৫০) ও বাবা সোলেমানকে (৬০) লঞ্চে তুলে দিয়ে পরের লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিলো তাদের দুই মেয়ে বন্যা ও বিউটির। বাবা-মার জন্য তারা নদীর কিনারে বসে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। বন্যা জানান, তাদের মা-বাবাকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে তারা মুন্সিগঞ্জ ফিরছিলেন। পরের লঞ্চে উঠেই তারা দূর্ঘটনার খবর পান। লঞ্চের যাত্রী সুনিতা সাহার বোন মনিকা সাহা বলেন, তার বোন সুনিতা ও সুনিতার দুই ছেলে বিকাশ সাহা এবং অনিক সাহা রোববার সকালে ঢাকা যান। ফেরার পথে লঞ্চ ডুবে মনিকা ও তার দুই ছেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জের উপ পরিচালক (বন্দর) মোবারক হোসেন বলেন, টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার আগে টার্মিনালের ভয়েজ অব ডিক্লারেশন অনুযায়ী ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহ্ জামান জানান, দূর্ঘটনার শিকার একজন নারীকে এলাকাবাসি উদ্ধার করে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে আসে। বেশ ভূষা দেখে তাকে হিন্দু ধর্মালম্বি বলে মনে হয়েছে। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। এ রিপোর্ট লেখার সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ঘটনাস্থলে ছিলেন।
বাসস/সংবাদদাতা/এমএআর/১১৩০/স্বব