বাসস সংসদ-৫ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ইসলামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

158

বাসস সংসদ-৫ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সমাপনী ভাষণ
ইসলামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ সালের ২১ মে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর মৃত্যুবরণের পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, রাজিব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমরা যোগদান করেছিলাম তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে প্রায় সবাই এসেছিলেন। আমেরিকা থেকে, ব্রিটেন থেকে- প্রিন্স চার্লস, ইয়াসির আরাফাতসহ সকলে উপস্থিত। ফিলিস্তিন প্রধানমন্ত্রী ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালে খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্ত সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদীর সাথে হ্যানশেক করার ছবি। সেই হাত যেন আর ছাড়ে না। শুধু তাই না তার সঙ্গে টেলিফোনে তার যে সেই খিলখিল হাসি। তার যে হাসির আওয়াজ সেটাও তো সকলের কানে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পুনরায় প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দেন বেগম খালেদা জিয়া দিকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদী আসবেন তখন বাধা দেওয়া হয় এবং হেফাজতের সাথে হাত মেলানো কেন? কি ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি তখন শুরু করল হেফাজতের তা-ব। হেফাজত তো একা নয় হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত বিএনপিও জড়িত। তাদের প্রত্যেকটা কর্মকা-ে দেখা যায়। হেফাজতের সকলেই যে এরমধ্যে জড়িত তাও কিন্ত না। এটাও বাস্তবতা। তারপরেও দেখেছি ২৬ মার্চ হেফাজত একটা গুজব ছড়ালো বায়তুল মোকাররমে মানুষ মারা হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সহিংসতা চালায় এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজত এবং বিএনপি জামায়াতের বিবৃতি দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। ২৮ মার্চ হরতাল দিয়ে সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে তারা তান্ডব চালায়। আওয়ামী লীগ অফিস দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘর সরকারি অফিস আদালত পরিবহনে হামলা ও ভাঙচুর এবং পোড়ানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ এবং এক সপ্তাহের লক ডাউন প্রসঙ্গেও বিস্তরিত সংসদে তুলে ধরেন।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাস নামের যে মহামারী দেখা দিয়েছিল তার দ্বিতীয় ঢেউ এখন আবার শুরু হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জানি, কষ্ট হবে, তারপরেও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি সংসদে আসার আগেই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে, নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি সংসদে বলেন, হয়তো মানুষের একটু সমস্যা হবে তারপরেও আমি বলবো জীবনটা অনেক বড়, জীবনটা আগে। মানুষের জীবন বাঁচানো এটাই সকলের করণীয়। তাই, এই ভাইরাসের সংক্রমণটা যাতে না বাড়ে এবং এই দ্বিতীয় সংক্রমণে যেটা হচ্ছে সেটা সমগ্র বিশ^ব্যাপী আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাই, দেশের মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করলাম ২৯, ৩০ এবং ৩১ মার্চ এই তিন দিন খুব বেশি বেড়ে গেল করোনা মৃত্যু হার ও সংক্রমণ। এরপর থেকে এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কখনও কমছে-এই অবস্থা। সে কারণেই আমাদের এই ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে, বিয়ে-শাদী এ সকল অনুষ্ঠান সব বন্ধ রাখতে হবে। যেখানেই লোক বেশি, ভীড় হয় সেসব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।’
তিনি কোন লোক সমাগম বা বাজারে গেলে সেখান থেকে ফিরেই গরম পানির ভাপ গ্রহণে সকলকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এবারের ভাইরাসের ধরণটা এমন চট করে বোঝা যায় না কি হয়েছে, হঠাৎ করেই খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। যে কারণে সবাইকে সাবধান থাকার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, এরআগে দেখা গেছে করোনায় বয়স্করাই সংক্রমিত হয়। কিন্তু, নতুন রোগের ধরণে দেখা যাচ্ছে তরুণ এবং শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে। কাজেই, তরুন ও শিশুদেরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও সবাইকে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তাছাড়া, আমরা পর্যটনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের প্রবেশস্থলেও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই তাদের যাতায়াত বন্ধ করেছে। শপিং মলগুলোতে অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে কিন্তু সরাসরি পণ্য সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ১১ এপ্রিলের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে যেন মানুষের সংক্রমণ না হয়।
সরকার সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, উল্লেখ কলে তিনি বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা দিয়েছি এতে করে আমরা মনে করি যে ব্যবস্থা নিয়েছি সেটাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে। তবে, এরপরে মানুষ যেন একটু ডেসপারেট হয়ে গিয়েছে সেটাও বন্ধ করতে হবে। সবাইকে অবাধে চলাফেরাটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি এ সময় মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলমান বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তার সরকারের গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৮২৩/আরজি