নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ৭৯০ পুনর্বাাসিত ভিক্ষুকের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরে

698

নীলফামারী, ২৫ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন জীবীকার তাগিদে হাসিনা বেগম (৫০) নেমেছিলেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে পুণর্বাসিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়েন তিনি। নিজ কর্মের আয়ে জীবনযাপন শুরু করলেও বাসস্থানের উপযোগী একটি ঘরের অভাব ছিল তার। সেই ঘরের অভাব পুরণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে।
হাসিনা বেগমের বাড়ি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের টটুয়ার ডাঙ্গা গ্রামে। তার দুই শতক জমির উপর নির্মিত হয়েছে প্রকল্পের আধাপাকা টিন সেডের ঘর। স্বপ্নের ওই ঘরে বসবাস করতে পেরে তিনি এখন বেজায় খুশি। হাসিনা বলেন,‘শেখ হাসিনার দয়াত হামেরা ঘর পাইছি। ওইটা ঘরোত নিন পাড়িয়া এলা মেল্লা দিন বাঁচিবার মনাছে।’
শুধু হাসিনাই নয়, ওই উপজেলায় তার মতো প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর পেয়েছে উপজেলার ৭৯০ জন পুর্ণবাসিত ভিক্ষুক। অসহায় এসব মানুষের এখন ঠাঁই হয়েছে ওই প্রকল্পের ঘরে। ২৭৯ বর্গফুটের আধাপাকা টিনসেডের ঘর পেয়ে খুশি তারা সকলে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান, যার জমি আছে ঘর নেই তাঁর নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন সকলে।
একই উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামে একই প্রকল্পের অধীনের ঘর পেয়েছেন মশিউর রহমান (৫৫)। ৪ শতক জমির বসতভিটায় বাঁশ আর খড়ের তৈরী নড়বরে ঘরে বাসবাস ছিল তার। অর্থাভাবে মেরামত করতে না পারায় ঘর হয়ে পড়েছিল বসবাসের অযোগ্য। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর পেয়ে দেখছেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।
একইভাবে কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাম্মাত হোসেন (৫০), বৃদ্ধা জাহেদা বেগম (৬৫), রনচন্ডী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের অমিছা বেগম (৫৫), মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর সিঙ্গেরগাড়ী গ্রামের আলেমা বেগমসহ (৬০) অসহায় হত দরিদ্র ৭৯০ পরিবার তাদের বসবাসের উপযোগী ঘর পেয়ে উপভোগ করতে শুরু করেছেন নতুন জীবন।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১ কোটি টাকা ব্যয়’ ১০০ জনকে একটি করে ঘর তৈরী করে দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪২ ও ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৪৮ পরিবার ঘর পেয়েছেন। ৩টি অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ১০টি উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলায় মোট ৭৯০ পুর্ণবাসিত ভিক্ষুক পরিবার প্রধান মন্ত্রীর দেয়া ঘর পেলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ১০টি উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প অন্যতম। ওই প্রকল্পের অধীনে জমি আছে ঘর নেই এমন ৭৯০ পুর্ণবাসিত ভিক্ষুক পরিবার ঘর পেয়েছে। এসব ঘরে তারা এখন নির্বিঘেœ বসবাস করছে।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার পর ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। আর যারা ভূমিহীন তাদের সনাক্ত করে তালিকা তৈরি করে সরকারী জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।