অফিস সরঞ্জামাদীর সংরক্ষণাগার ‘ঐতিহ্য’

736

কুড়িগ্রাম, ২৪ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দোতলার একটি কক্ষে বিলুপ্ত প্রায় অফিস সরঞ্জামাদির সংরক্ষণাগার ‘ঐতিহ্য’ আগ্রহীদের নজর কাড়ছে। এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে ব্রিটিশ আমলের লোহার সিন্দুক, বাহারী গেটের বাতি, পুরনো দিনের বাতিল টেলিফোন সেট, ই-গর্ভন্যান্স এর যুগে বাতিল হওয়া টাইপ রাইটারসহ ৩২ ধরণের অর্ধশত স্মারক।
এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে সেগুলো সংরক্ষণের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নেন কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ উদ্বোধন করেন ‘ঐতিহ্য’ নামের সংরক্ষণাগারটি।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তায় আলমারীর উপর, র‌্যাকের ফাঁকে, পড়ে থাকা, অযতœ অবহেলায় নষ্ট হবার উপক্রম কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহ করে সাজানো হয়েছে এই সংরক্ষণাগারটি।
এ ব্যাপারে আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাসস’কে বলেন, ‘অতীতের জ্ঞান ও আর কৌশল সম্পর্কে জেনে বর্তমানে তা কাজে লাগানোর একটা প্রয়াস থেকে এই সংরক্ষণাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখান থেকে শুধু প্রশাসন ব্যবস্থার অতীত নয়, দেশের অনন্য ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা সংরক্ষণাগারটিতে রয়েছে ডুপ্লিকেটিং মেশিন। স্টেনসিল পেপারে মুদ্রিত চিঠির প্রয়োজনীয় সংখ্যক অবিকল নকল (কপি) করার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করা হতো।বর্তমানে কম্পিউটার ও প্রিন্টারের ব্যবহার শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে এই মেশিনটি।
এক সময় কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য আরাম কেদারা আর এসডিও আমলের সৃদৃশ্য বাতি স্থান পেয়েছে এখানে। ডট মেট্রিক্্র প্রিন্টার দিয়ে স্টেনসিল পেপার কাটা হতো।বর্তমানে ফটোকপিয়ার মেশিন চালু হবার পর বন্ধ হয়ে গেছে এর ব্যবহার। সেটিও স্থান পেয়েছে এখানে।
এই সংরক্ষনাগারে নানা মডেলের বেশ কিছু পুরাতন টাইপ রাইটার মেশিন রয়েছে। আছে ইলেকট্রিক টাইপ রাইটার, ২০০২ সালের পর যা বন্ধ হয়ে যায়। রয়েছে থিন পেপার, আলপিন ও পিন কুশন, কারেক্টিং ফ্লুইড, কার্বন পেপার, মাইক্রো ফ্লপি ডিস্ক। আরো রয়েছে পিতলের টোকেন, যা বিল দাখিলকারীদের দেয়া হতো।
বর্তমানে সকল টেলিফোন (ল্যান্ডফোন) পুশ বাটনে চলে। পূর্বে এনালগ পদ্ধতিতে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডায়াল করতে হতো। ১৯৯৮ সালে এ অফিসে ব্যবহৃত এনালগ টেলিফোন সেট ও ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক প্রিন্টিং ক্যালকুলেটর সংগৃহীত রয়েছে এখানে।
এখানে রয়েছে ব্রিটশি আমলের একটি লোহার সিন্দুক। এই সিন্দুকটিতে গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেত, সরকারি আদায়কৃত অর্থ, দাখিলা ও ডিসিআর বই সংরক্ষণ করা হতো।
১৯৮৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে কুড়িগ্রাম মহকুমা জেলায় উন্নতি হয়। দীর্ঘসময় মহকুমা থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের প্রশাসন পরিচালনায় ব্যবহৃত অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। তবে বাড়ছে ‘ঐতিহ্য’র এর সংগ্রহের তালিকা।
বর্তমানে জেলা প্রশাসনের সহকারী নাজির আব্দুর রাজ্জাক বিশ^াস দায়িত্বে রয়েছেন। এখানে রয়েছে সংগৃহিত সরঞ্জামের তালিকা ও একটি মন্তব্য খাতা।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, ‘উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলো থেকে পুরাতন সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে আগামীতে স্মারকের সংখ্যা বাড়বে। তখন একটি বড় কক্ষে সংরক্ষণাগারটি স্থানান্তর করা হবে।’
তিনি বলেন, গবেষক ছাড়াও সাধারণ মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে সংরক্ষণাগারটি। সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে এই উদ্যোগটি শুরু হলেও এটি একদিন সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।