সোনার মানুষ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাংলা নববর্ষ বরণ

757

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার মাধ্যমে সোনার মানুষ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাঙালি জাতি ১৪২৫ বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে ।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই স্লোগানে বাংলা নতুন বছরকে সাদরে বরণ করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।
শনিবার সকাল ৯ টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ ও টিএসটি মোড় ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে শেষ হয়। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সকলের অংশগ্রহণ ও উচ্ছ্বাসে আরো দীপ্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৫।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের জন্য নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা।
শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানে সবকিছুই। ঢাক-ঢোলের বাদ্যি আর তালে তালে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস মাতিয়ে রেখেছিল পুরো শোভাযাত্রা।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হওয়া এ শোভাযাত্রা।
কেবল দেশের বড় শহরগুলোতেই নয়- এবারের বর্ষবরণ দেশের উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
সকল বিভাগীয় শহর, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা শহর ও নদীবন্দর এলাকায় আজ সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ বরণ-উৎসব শুরু হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বার্তা সংস্থা বাসস’র স্টাফ রিপোর্টার এবং জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট ও বিভিন্নি সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় সুর্যোদয়ের সাথে পৌর পুকুরে ভাসমান বজরায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন, আবহমান গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্য নিয়ে শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়েছে।
ভোর ৬টা বাজার সাথে সাথে পৌর পুকুরে মেয়র আনোয়ার আলী ভাসমান বজরায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে শহরে গরুর গাড়ীসহ আবহামান গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্টিত হয়। সকাল ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাসভবনে পান্তা উৎসব ও বর্ষবরণের সংগীত দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়।
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, আগামী সুন্দর স্বপ্নের প্রত্যয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে নানা আয়োজনে শরীয়তপুরে বাংলা ১৪২৫ সালকে বরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের ও পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের কর্মসূচি শুরু হয়। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
শেরপুর সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়। ভোর থেকেই কালেক্টরেট চত্বরের ডিসি উদ্যানে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো… গানের সুরে বছরের নতুন সূর্যকে আহবান জানিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারের কালেক্টরেট চত্বরে সমবেত হয়। পরে সকাল আটটায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ঈশ^রদী সংবাদাতা জানান, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ পাবনা জেলার ঈশ^রদী উপজেলা পরিষদ এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালীর আয়োজন করে। ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ আনন্দ র‌্যালীর নেতৃত্ব দেন। র‌্যালিটি ঈশ^রদী শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে উপজেলা পরিষদে এসে শেষ হয়।
চুয়েট সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ বর্ণিল আয়োজনে বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে সকালে চুয়েট গোল চত্বরে বৈশাখী শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিশুকিশোররা অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানান, বাঙালির প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ উপলক্ষে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও আনন্দঘন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। উদ্বোধনী বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির সংস্কৃতি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলশক্তি। এই চেতনাকে আমাদের ধারণ ও লালন করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নববর্ষ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটের সামনে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। এসময় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানীর আজিমপুর অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের সবুজ চত্বরে আম গাছ তলায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্কুলের অধ্যক্ষ রেজাউজ্জামান ভূঁইয়া সকালে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…..’ এই গানটির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ছাত্রীরা বিভিন্ন গান, নাচ, কবিতা ও ছড়া পরিবেশন করে।