বগুড়ায় ২০ হাজার শ্রমিকের হাতে তৈরী হচ্ছে এ্যানটিক গহনা

469

বগুড়া, ২০ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : প্রাচীনকালে মানুষ মাটির তৈরী গহনা ব্যবহার করতো। এরপর লোহা, তামা রুপা ও সোনার গহনা ব্যবহার শুরু করে। এখন সোনার দাম আকাশ চুম্বি হওয়ায় মানুষ বেছে নিয়েছে তামা, পিতল ও দস্তার তৈরী এ্যানটিকের গহনা। যা পরা ও বহণ করা নিরাপদ।
বগুড়ার এ্যানটিক পল্লী গড়ে ওঠে প্রায় ৫০ বছর আগে জেলা শহরের উপকন্ঠে ধরমপুর ও বারপুরে। প্রায় ২০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে এ্যানটিক কারখানার কুটির শিল্প। ৩ সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষে গহনা তৈরী করে। এই ২০ গ্রাম থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার গহনা যায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার এ্যানটিকের গহনা পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।
করোনার শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়লেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এ্যানটিক পল্লী। যেখানে প্রায় ২০ সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ ব্যাস্ত সময় পার করছেন। এ্যানটিকে কাজ করে তাদের জীবন মান পাল্টে গেছে। সকালে গহনার বানানোর ছোট-ছোট হাতুড়ি খুট-খাট শব্দ ও গ্যাস পটের সড়-সড় শব্দে গ্রামর মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আগে সোনার গহনা তৈরীর জন্য কয়লার আগুনে পিতলের নল দিয়ে গহনার জোড়া লাগানো হতো। এখন প্রযুক্ত পাল্টে গেছে তারা গ্যাসের পটে চাপ দিয়ে এ্যানটিকের গহনাকে জোড়া লাগায়। তারা একটি মোমের ছাঁচে জোড়া দিয়ে তৈরী করেন নানা ডিজাইনের গহনা। এ গহনা তৈরী হয় তামা, পিতল ও দস্তার সংমিশ্রণে। অপূর্ব হতের কারুকাজে তৈরী হচ্ছে চোখ ধাঁধানো গহনা। এগুলো সোনা নাকি অন্য কোন মূল্যবান পদার্থের তা পরীক্ষা না করে ধরার কোন উপায় নেই।
বিদ্যুৎ মিয়া আগে গহনা তৈরীর কারখানায় কাজ করেতো। এখন তিনি নিজেই কারখানার মালিক। তিনি জানান, এই ২০টি গ্রামে বেকার যুবকের সংখ্যা কম।
ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন জানান, সোনার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ্যানটিকের গহনা চাহিদা বেড়েছে। এখানকার অনেকে যারা রিক্সা চালাতো, দিন মজুর ছিল, বা অন্যান্য পেশা নিয়োজিত ছিল। তাদের অধিকাংশই প্রথমে এ্যানটিক কারখানার শ্রমিক ছিল। এরপর তার নিজেরাই এখন এক একজন এ্যানটিক শিল্পের মালিক বনে গেছে। এর কাঁচা মাল আসে ভারত থেকে। কারন সেখানে তামা, ব্রোঞ্জ, দস্তা পিতলের খনি আছে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে তেমন বেকার নেই । তিনি আরো জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার গহনা বেচা কেনা হয়ে থাকে। মাসে ৩ কোটির অধিক এ্যানটিক গহনা বগুড়ার ধরমপুর ও বারপুর থেকে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিসিক সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে তারা এই গহনা বিদেশে রফতানি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।
ওই গ্রামের মানুষ গহনা তৈরী কাজে ব্যাস্ত থাকে। এমন কোন ডিজাইনের গহনা নেই যে তারা তৈরী করতে পারেন না। তাদের হাত দক্ষ ও সুনিপুঁণ। তাদের একজন সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি মিথিলা এ্যানটিক কারকানার মালিক। প্রথমে সে দুইমাস একটি এ্যানটিকের কারখানায় কাজ করেছেন। এখন নিজেই কারখানা দিয়েছেন। প্রতিমাসে আড়াই লাখ টাকার এ্যানটিক গহনা সরবরাহ করে থাকেন। আর এক গহনা শিল্পী জানান, তিনিসহ তার পরিবারের ৪ জন সদস্য এ কাজ করছেন। আগে তাদের অনেক অভাব অনটনের মধ্যে দিন যাপন করতে হয়েছে। এখন এই কাজ করে তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
ধরমপুর ও বারপুরের এ্যানটিকে ক্ষুদ ও কুটির শিল্প সহায়তার প্রশ্নের সহায়তা প্রসঙ্গে বগুড়া বিসিকের ডিজিএম জাহেদুল ইসলাম জানান, তাদের তরফ থেকে সহায়তার জন্য কেউ আসেনি। এলে নিশ্চয়ই সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনে বলেন, এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। অবশ্যই তাদের সহায়তায় বিসিক এগিয়ে আসবে।