উৎপাদন ঠিক রাখতে নারী কর্মীর সুস্থতা দরকার

608

ঢাকা, ১৮ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : বরিশালের গ্রামের মেয়ে সোহানা আক্তার, মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলেন একই গ্রামের হেলাল খানকে। বিয়ের পরে সবাই মেনে নেবেন। এমনটাই ধারণা ছিল তাদের। কিন্তু হেলালের পরিবারও সেটা মেনে নেয়নি।
কোন পরিবারই তাদের বিয়ে মেনে না নেয়ায় একদিন দু’জনে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে হেলালের এক খালাতো ভাইয়ের বাসায় ওঠেন। যিনি একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। কয়েক দিন পর তিনি তাদের দু’জনকেই গার্মেন্টেস কারখানায় চাকরি দিয়ে দেন। বেশ ভালই চলছিল তাদের।
কিছু দিন পর হঠাৎ সোহানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজে যেতে পারছে না। অথচ অফিসে কাজের প্রচন্ড চাপ। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি তাকে কয়েক দিন বিশ্রামে থাকার কথা বলেন। কিন্তু সে উপায় নেই। বাধ্য হয়েই চাকরি ছেড়ে দেন সোহানা।
কুড়িগ্রামের মেয়ে রাহেলা একই গার্মেন্টসে চাকুরি করেন। তারও নতুন চাকুরি। নতুন কাজে যোগ দিয়ে ১৫দিন যেতে না যেতেই তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবে অনেক মেয়েই প্রথম প্রথম গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি নিয়ে কাজের চাপে কিংবা অন্য যে কোন কারণেই হোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার অনেকের চাকরি চলে যায় এই অসুস্থতার কারণে।
তবে, গার্মেন্টেসের বেলায়ই এটা বেশি ঘটে থাকে। কারণ, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ছুটির সুযোগ কম থাকে। কেননা, বায়ারদের চাহিদা মত তাদেরকে শিপমেন্ট দিতে হয়। বাংলাদেশের গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসবে কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। সঙ্গত কারণেই গার্মেন্টস ঠিকমত চালু রাখতে এ সব নারী কর্মীর সুস্থতা একান্ত দরকার।
আর এ জন্য গার্মেন্টস মালিকদেরও একটা বড় ভূমিকা থাকা দরকার। তাদের মনে রাখতে হবে, কর্মী সুস্থ না থাকলে ফ্যাক্টরি চালু রাখা যাবে না, ঠিকমত সময়ে শিপমেন্ট করতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের বৈশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ আসে তৈরী পোশাক রপ্তানী থেকে।
এক সময় বাংলাদেশকে কৃষি প্রধান দেশ বলা হলেও বর্তমানে বদলে গেছে সে কাঠামো। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ। যার পিছনে একটা বড় অবদান রয়েছে গার্মেন্টস বা পোশাক শিল্পের।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এসএনভি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘পোশাকশিল্পে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের পোশাকশিল্প কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নারী কর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসহ শারিরীক সুস্থতা জরুরী। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ পোশাকশিল্পের মালিকদের এর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন।
তারা বলেন, নারী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় কারখানার ভেতরে-বাইরে সচেতনতামুলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আলোচনায় অংশ নেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) মোহাম্মদ শরীফ, পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক নজরুল ইসলাম, এসএনভির আরএমজি ইনক্লুসিভ বিজনেস প্রোগ্রামের টিম লিডার ফারথিবা রাহাত খান এবং আলহেরা হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
]মোহাম্মদ শরীফ বলেন, পোশাকশিল্প কারখানার নারী কর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপড় জোর দিয়ে সরকার ৩৫৪টি কারখানায় বিনামূল্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পিল ও কনডম দিচ্ছে। পাশপাশি, জন্ম নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা ইনজেকশন সেবাও দিচ্ছে। করোনাকালে মালিকপক্ষকেও কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওষুধ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্ধথা নিতে হবে।
বিজ্এিমইএ পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে কারখানাগুলোতে কর্মীদের স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ, কর্মী সুস্থ না থাকলে ক্রয়াদেশ নেয়া নিরর্থক, যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করা যাবে না। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বিজিএমইএ একসঙ্গে কাজ করতে চায়, যাতে এ খাত টেকসই ও দৃস্টান্তমূলক হয়।
এসএনভির টিম লিডার ফারথিবা রাহাত খান জানান, বিভিন্ন পোশাক কারখানায় প্রশিক্ষণ দিয়ে মালিক, ক্রেতা ও কর্মীদের সচেতন করার কাজ করছেন তারা। কর্মঘন্টার মধ্যে কর্মীরা যাতে স্বাস্থ্য সেবা পান সে লক্ষ্যে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
আল হেরা হাসপাতালের চিকিৎসক মো, আবুল হোসেন বলেন, পোশাক কর্মীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের পরিধি আরো বাড়ানো দরকার।