বাংলাদেশ-মালদ্বীপ পিটিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত

776

ঢাকা, ১৮ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ উভয় দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম মোহামেদ সলিহর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পিটিএ চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে দুই নেতা ঐকমত্যে পৌঁছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশ সম্মত হলে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে পিটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য তুলে ধরে করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ মালদ্বীপের গুরুত্বপূণ্য বাণিজ্য অংশীদার এবং অদূর ভবিষ্যতে পিটিএ স্বাক্ষরিত হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষার জন্য আইসিজে’তে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট জাস্টিস) বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন এবং ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যুব উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল সহ সম্ভাবনাময় একাধিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সলিহ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মোকাবেলা করা সব ইস্যুতে সমাধান খুঁজতে বিভিন্ন ধরনের সিএসএলএম আমদানির জন্য মালদ্বীপের প্রতি আহ্বান জানান।
উভয় পক্ষ শুল্ক সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবিত চুক্তির চূড়ান্তকরণ এবং দ্বৈতকর এড়ানোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয় নেতা নৌপরিবহন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মালে এবং বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ মালদ্বীপের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ মালদ্বীপের শান্তিরক্ষীদের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ বলেন, মালদ্বীপে সকল বাংলাদেশী প্রবাসীকে বিনামূল্যে কোভিড ১৯ টিকা দেয়া হবে, প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি মালদ্বীপের মেডিকেল প্রফেশনালদের ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব করেন।
সলিহ দুই দেশের অর্থনীতিতে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানের প্রশংসা করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দুই নেতা জাতিসংঘ এবং জলবায়ু ফোরামসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক প্লাটফর্মে একত্রে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশ মালদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। মালদ্বীপ গভীর সমুদ্র থেকে টোনা ফিস আহরণে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।
তিনি বলেন, উভয় দেশের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পর্যটন ও বিমান যোগাযোগ সুবিধা দেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, এলজিআরডি এবং সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এসএম রেজাউল করিম,পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মালদ্বীপের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল্লা শহীদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী ফাইয়াজ ইসমাইল, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব সাবরা ইব্রাহীম নরদেন এবং পররাষ্ট্র সচিব আবদুল গফুর মোহাম্মদ।
পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রক্ষিত পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরে মৎস এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে ৪টি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী টাইগার গেটে তাকে অভ্যর্থনা জানান।