বাসস দেশ-১২ (লিড) : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত

661

বাসস দেশ-১২ (লিড)
ঈদুল আযহা-উদযাপিত
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত
ঢাকা, ২২ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানীর মধ্যদিয়ে পালন করছেন তাদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব।
অাল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে।
সকাল ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ এহ্সানুল হক। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এ জামাতের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঈদগাহে পৌঁছলে সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন তাঁকে স্বাগত জানান।
এ প্রধান জামাতে মহিলা ও বিদেশী কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।
জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
প্রধান এ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবার ৪০৯টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করে। দক্ষিণ সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৪টি করে এবং জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠসহ মোট ২৩০টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ১৭৯টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়। এর পর পর আরো ৪টি জামাত যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয় জামাতে তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের ইমাম ড. মাওলানা মুসতাক আহমাদ, তৃতীয় জামাতে মহাখালী হোছাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম আল ফারুক, চতুর্থ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতী মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা আব্দুর রব মিয়া ইমামতি করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আযহার জামাতের আয়োজন করা হয়। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদার, সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীবৃন্দ এবং এলাকার মুসল্লীরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সাড়ে ৭টায় ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগ শরীফে ঈদের ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল ৮টা, দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে ৯টা এবং শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্ল¬¬াহপাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁরই রাস্তায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মহিমায় কোরবানী করেন। অনেকে আগামীকাল ও পরদিনও কোরবানী করেন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এবারে নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডসহ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ১ হাজার ৫৪টি পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৬০২টি ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৪৫২টি।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
মুসলিমদের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গেছেন।
পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
বাসস’র দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে সকাল ৯টায় এক সাথে প্রায় সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি মুসল্লির নামাজ আদায় করেন। এই জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কাশেম (কাশেমী)।
বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আবু নইম মো. আব্দুস সবুর ও পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েমসহ জেলার সাধারণ মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেন।
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান। এটি শোলাকিয়ার ১৯১তম ঈদুল আজহার জামাত।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
এ ছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদ্যাপন করে।
রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীর শিশুপার্কগুলোতে শিশুদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
কক্সবাজার, সিলেট, কুয়াকাটা ও সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের ভিড় ছিলো দেখার মতো।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল আযহা উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানীর পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিকেলের মধ্যেই রাজধানীর বেশির ভাগ জাযগায় পরিচ্ছন্ন থাকতে দেখা গেছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে ২১ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাসস/এএসজি/এমএসএইচ/২১২৫/-কেজিএৃ